ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করেছে: মাসুদ সাঈদী 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪
আ. লীগ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করেছে: মাসুদ সাঈদী 

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এই বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান। কারণ আপনাদের মাধ্যমেই আমরা আমাদের মানচিত্র পেয়েছি, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।

আপনারাই বাংলাদেশ। আপনারাই আমাদের মানচিত্র।

কোনো ব্যক্তি বা দলের কথায় এ দেশ স্বাধীন হয়নি উল্লেখ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, একটি দল নিজেদের এবং তাদের নেতাকেই একমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বলে মিথ্যা দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। এই দাবির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মূলত ত্রিশ লক্ষ শহীদের বীরত্বগাথা ভূমিকাকেই অবমাননা করেছে। অপমান করেছে। আওয়ামী লীগ ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। মূলত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে এক ব্যক্তি ও এক দলের অর্জন দাবি করে মুক্তিসংগ্রামী বীর জনতাকে অপমানিত করেছে।  

মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পিতা আল্লামা সাঈদীকে নির্দোষ দাবি করে পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেন, আল্লামা সাঈদী আওয়ামী লীগের ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার। তাকে ষড়যন্ত্র করে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।  

মাসুদ সাঈদী উপস্থিত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশ্যে বলেন, এই আপনারাই সাক্ষী, পিরোজপুরের একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের কোনো অভিযোগ করেনি বরং ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সুবিধাভোগী বাটপার টাইপের কিছু লোককে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে ট্রাাইবুনালে আল্লামা সাঈদীর মতো একজন নির্দোষ পৃথিবী বিখ্যাত আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পাঠিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই অপমান করেছে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টায় পিরোজপুর পৌরসভা কর্তৃক পিরোজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন।  

মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা স্মরণ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে যেসব বীর সন্তান পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন, জাতি চিরদিন তাদের কথা স্মরণ করবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা এখন সমাজ ও জীবনে কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনার সময় এসেছে। বিগত দিনের সরকারগুলো মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কতটা মর্যাদা দিয়েছে? শহীদ বুদ্ধিজীবী, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাই তো কোনো সরকার এখনো প্রকাশ করলো না। কেন করলো না? কেন নতুন কোনো সরকার এলেই আবার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হয়?

লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে আগে। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশবাসীকে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছিল, সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা কতটা সফল? বৈষম্য এখনো রয়েছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। দুর্নীতি আমাদের সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারন করেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। ২৪ এর চেতনাকে আমাদের ধারন করতে হবে। বিজয় দিবসের প্রকৃত অর্থ তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য সমান অধিকার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবো।

আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। একাত্তরের বিজয় আমাদের পথ দেখিয়েছে। এখন প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে একটি প্রকৃত বৈষম্যহীন কল্যাণময় বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বিজয়কে অর্থবহ করতে হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটি দেশ রেখে যেতে হবে, যেখানে তারা গৌরবের সঙ্গে বলতে পারবে—আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং বিজয়ের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছি এবং সেটিকে রক্ষা করতে পেরেছি।

পিরোজপুর পৌরসভা প্রশাসক মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী আখতার আহমেদের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধাগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পিরোজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জেলা আহবায়ক আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম হোসেন।  

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি জহিরুল হক, বিএনপির জেলা সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন প্রমুখ।

এর আগে সকাল ৯টায় বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকীতে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত র‍্যালি ও আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মাসুদ সাঈদী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তার যথার্থ উদয় ঘটে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। একটি গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্রই ছিল স্বাধীনতার ইপ্সিত লক্ষ্য। কিন্তু মহল বিশেষের অপরাজনীতি ও অহমিকার কারণে সে প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যখন পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করা উচিত ছিল তখন ক্ষমতাসীনরা জুলুম নির্যাতন হত্যা ও বাক স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার দেশি বিদেশি চক্রান্তে লিপ্ত ছিল।  

অতীতের সকল গ্লানি ভুলে ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে অজস্র শহীদের রক্ত স্রোতে অর্জিত এ স্বাধীনতায় এখন থেকে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। জুলুম অত্যাচার চলবে না। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি যে দেশে মানুষ গুম, খুন ও হত্যার শিকার হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে আওয়ামী স্বৈরাচার ও বাকশালীদের পতন হয়েছে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।  

নাজিরপুর উপজেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত র‍্যালিপূর্ব আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নাজিরপুর উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সেক্রেটারি কাজী মোসলেহ উদ্দিন, নাজিরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এড. আবু সাইদ মোল্লা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নাজিরপুর উপজেলা শাখা সভাপতি শেখ আবু হানিফ, সেক্রেটারি নাজমুস সাকিবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এদিকে, ৫৪তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকেল ৪টায় পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত ৩ শতাধিক মোটরসাইকেলের এক বিশাল র‍্যালি জিয়ানগরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালিতে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আকী হোসেন, সেক্রেটারি প্রভাষক তৌহিদুর রহমান রাতুলসহ উপজেলা জামায়াত নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। র‍্যালি চলাকালে রাস্তার দুইধারের উৎসুক জনতা ও ব্যবসায়ীরা মাসুদ সাঈদীকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।