কলকাতা: ভারতের রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত, আজমীর শরীফে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় চাদর চড়ালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার(৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর হয়ে এই চাদর চড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা দিয়ে রিজিজুর হাতে সেই চাদর তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই চাদর নিয়ে রিজিজুর দিল্লি থেকে বিমানে করে জয়পুর যান। সেখান থেকে সড়ক পথে দরগায় গিয়ে সেই চাদর চড়ান রিজিজু।
এসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজস্থানের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি হামিদ খান মেওয়াতি, সংখ্যালঘু মোর্চার জাতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকীসহ অন্যরা। পরে রিজিজু জানিয়েছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাঠানো চাদর নিয়ে দরগায় এসেছিলাম। আমার সৌভাগ্য হয়েছে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী দরগায় আসার। আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছি।
আজমীর শরীফের দেওয়ান জয়নুল আবেদিন আলি খানের ছেলে নাসিরুদ্দিন চিশতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দরগায় চাদর পাঠিয়েছেন। বিষয়টিকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। পূর্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় আজমীর শরীফে চাদর চড়ানোর যে দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও সেই পথ অনুসরণ করেছেন।
উল্লেখ্য, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির শাহাদাত বার্ষিকিতে প্রতিবছর উরস অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় চাদর চড়িয়ে আসছেন। তবে হিন্দুসেনা সম্প্রতি দাবি করেছে, আজমীর শরীফ দরগার জায়গায় একটি শিব মন্দির রয়েছে। এই নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে।
হিন্দুসেনার জাতীয় সভাপতি বিষ্ণুগুপ্ত আজমীর দরগাকে শিব মন্দির ঘোষণা করার জন্য রাজস্থানের একটি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে মামলাটি শুনতে রাজি হয়েছিল আদালত এবং দরগা কমিটি, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে (এএসআই) নোটিশ জারি করার নির্দেশ দিয়েছিল। তারপর সেভাবে কিছু এগোয়নি। এরপরেই কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো বিজেপির সমালোচনা শুরু করে।
রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন দরগায় চাদর উপহার দিয়ে আসছেন সেই সময় তার দলের সদস্যরা আদালতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ এই দরগায় প্রার্থনা করতে আসেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী মোদীসহ সমস্ত প্রধানমন্ত্রী আজমীর দরগায় চাদর অর্পণ করেন। তারপরও তার দলের সদস্যরা আদালতে গিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। এরকম করে কী ধরনের বার্তা ছড়ানো হচ্ছে? যেখানে অস্থিরতা বিরাজ করে, সেখানে উন্নয়ন হতে পারে না।
ভারতের জয়পুর থেকে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে দরগা। এখানে বিভিন্ন সময়ে চাদর চড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন সময় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান,শীর্ষ রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক থেকে শুরু করে তারকাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। শুধু মুসলমান নয়, হিন্দুসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ আসেন নিজেদের মত দোয়া মোনাজাত করতে। প্রচলিত আছে প্রতিদিন কমপক্ষে 'সাত কম'এর ( সাত সম্প্রদায়) মানুষ আসেন এই দরগায়।
তথ্য মতে ১১৪২ খ্রিস্টাব্দে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন হযরত খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিশতি। সুফিবাদের বার্তা গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে ইরান ছেড়ে বিভিন্ন দেশে যাত্রা করেন। পরবর্তীতে আজমীরেই স্থায়ীভাবে থেকে যান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ৫ জানুয়ারি ২০২৩
ভিএস/এমএম