কলকাতা: বাংলায় জ্বালানি সংকট। যার বিপাকে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির গোটা প্রক্রিয়া সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু খেঁজুর গাছের সংখ্যা আগের থেকে কমে যাওয়ায় গাছের পাতা পর্যাপ্ত মিলছে না। ফলে গুড় তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিউলিদের। এমন অবস্থায় খেঁজুর পাতার বদলে খড় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে হচ্ছে শিউলিদের। যে কারণে গুড়ে ধোঁয়ার ঘ্রান থেকে যাচ্ছে বলে, ক্রেতারা অভিযোগ করছে।
অপরদিকে, পর্যাপ্ত জ্বালানি কাঠও ঠিকমত না মেলায় সমস্যা যেন দিনেদিনে তীব্র হচ্ছে। যে কারণে কমতে শুরু করেছে রসের গুণগত মান এবং খেজুর গুড়।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গুড় বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ দরে কেজি দরে। জায়গা বিশেষ এবং মান অনুযায়ী সেই দাম চলছে ২৮০-৩০০ রুপির বেশি। সেখানে জ্বালানি খরচ পড়ছে প্রায় ১০০-১৫০ রুপি।
তাদের অভিমত, এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলায় খেজুর গুড় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। রঞ্জন বর নামে এক শিউলির জানান, এ বছর এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণায় শীত জাঁকিয়ে পড়েনি। ঠাণ্ডা কম আছে, ফলে রস সেভাবে মিলছে না। তার উপর জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গুড় তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। জ্বালানি সংকটের ফলে প্রভাব পড়তে পারে সাধারণ গুড়, দানাগুড় ও পাটালিরগুড়ের দামেও।
ওই জেলার নামখানার শিউলিদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় প্রয়োজনীয় জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত খেজুর রসের গুড় বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে এবং মিষ্টির দোকানগুলোয়। খেজুর রস সংগ্রহ করা থেকে গুড় প্রস্তুত করা; যে পরিমাণে পরিশ্রম এবং আর্থিক খরচ হচ্ছে সেই তুলনায় মিলছে না খেজুর গুড়ের বাজারমূল্য।
ওই জেলার ক্যানিং অঞ্চলের আরেক এক গাছি জানান, তারমধ্যে ছেয়ে গেছে ভেজাল গুড়ে। সাধারণরা খুব একটা খাঁটি খেজুর গুড় চেনে না। গুড়ের মিষ্টতা এবং ঘ্রান-এই দুটে দেখেই তারা খেজুর গুড় কিনে থাকেন। কিন্তু এই দুই বিষয় সহজেই নকল করা যায়। ফলে গ্রাহকরা ঠকে যাওয়ার পাশাপাশি তারা লোকসানের মুখ দেখে থাকে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বায়ান জানিয়েছেন তারা।
তবুও এতশতর মধ্যে বাংলার অতি প্রাচীন ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে আজও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে খেজুর রস সংগ্রহ এবং খেজুর গুড় প্রস্তুত করে চলেছে শিউলিরা। কারণ খেজুর রস শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। তাই খেজুর গাছ রোপন ও গুড় রক্ষার এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সকলেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, ২৪ ডিসেম্বরর ২০২৪
ভিএস/এমএম