ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মান্দায় ৮০০ একর খাস জমি রক্ষায় ইউএনওর অনন্য উদ্যোগ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
মান্দায় ৮০০ একর খাস জমি রক্ষায় ইউএনওর অনন্য উদ্যোগ 

নওগাঁ: নওগাঁর মান্দার উথরাইল বিলে খাস জমি উদ্ধার ও বেহাত হওয়া ব্যক্তি মালিকানা জমি প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।  

মঙ্গলবার ( ২১ জানুয়ারি) এ উপলক্ষে দুদিনব্যাপী বিল এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পে গণশুনানির আয়োজন করেন মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া।

গণশুনানির প্রথম দিনে অংশ নেন ভারশোঁ ইউনিয়নের চারটি মৌজার অন্তত আড়াইশ জন কৃষক।  

ইউএনও শাহ আলম মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিদের গণশুনানির বিষয়টি জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী জমির প্রকৃত কাগজপত্র আছে এমন ব্যক্তি নিবন্ধনে অংশ নেন। এরপর নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিরা তাদের দাবিকৃত জমির পক্ষে-বিপক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন। যাদের প্রমাণাদি সঠিকপ্রতিয়মান হচ্ছে, তাদেরকে তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির জমি কেউ জবরদখল করে থাকলে, তাকে তা ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুগের পর যুগ ধরে সরকারের ‘ক’ তপশিল ভুক্ত খাস সম্পত্তি দখল করে খাচ্ছেন অনেকেই। সেগুলো উদ্ধার করে দখলমুক্ত করা হচ্ছে।  

ইউএনও আরও জানান, এত বিপুল পরিমাণ জমির বিরোধ অফিসে বসে মিটানো সম্ভব নয়। আবার এসব কাজে বার বার অফিসে যেতে মানুষজনও হয়রানির শিকার হতে পারে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনের সেবা পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ।  

নিজের জমি বুঝে পেয়ে মান্দা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নাহিন প্রমাণিক জানান, দুটি আলাদা খতিয়ানে তাদের প্রায় ১৪ বিঘা জমি ১২ বছর ধরে অন্যের দখলে আছে। তার বাবা বেঁচে থাকাকালীন জমিগুলো তারাই ভোগ করতেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় কয়েকজন জমিগুলো অবৈধভাবে দখল করে ফেলে। পড়ালেখার জন্য বাইরে থাকায় জমিগুলো আর উদ্ধার করা যায়নি। হঠাৎ ইউএনওর এমন উদ্যোগে সাড়া দিয়ে জমি ফেরত নিতে এসেছেন তিনি। এরই মধ্যে শুনানিও হয়েছে। যেখানে সেই জমিগুলো তাদের বলে রায় এসেছে। এখন দখলদারদের নোটিশ পাঠালেই দখলমুক্ত হবে জমিগুলো।  

স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল জানান, বিল এলাকার এসব জমি নিয়ে প্রতি বছরই মারামারি হতো। মামলাও আছে অনেক। প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন জমির প্রকৃত মালিকরা স্বস্তি পাবেন। অন্যদিকে সরকারের খাস সম্পত্তিগুলোও সরকারের ঘরে ফিরে আসবে।  

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, শুধুমাত্র মান্দা নয়, জেলাজুড়ে হাজার হাজার বিঘা খাস জমি এবং পুকুর মানুষ ভোগ দখল করছে। এগুলো উদ্ধার করাই এখন মূল কাজ। এরই মধ্যে অনেক জমি ও পুকুর উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু জমির বিপরীতে মামলাও হয়েছে। সেগুলোর পক্ষে আদালতে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। গণশুনানির এমন কাজ অব্যাহত থাকবে।  

গণশুনানিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শারমিন জাহান লুনা, মান্দা থানার পরিদর্শক তদন্ত আব্দুলগণি, সেনাবাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় কয়েক গ্রামের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।