ঢাকা: দেশের সব খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যানে স্থাপনা বন্ধসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক যুব সমাবেশে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মাঠ-পার্ক, উদ্যানে উন্নয়নের নামে ওসমানী উদ্যান গত ৬ বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে। ধানমন্ডি মাঠে জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারছে না। তাজউদ্দীন আহমেদ পার্ক লিজ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের খেলার মাঠ উদ্যান এবং পার্কের একই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, ধানমন্ডি মাঠ সবুজ ভূমিটি একসময় উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে ধানমন্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড করার পরপরই মাঠটি ঘিরে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় সর্বসাধারণের বিচরণ ও খেলাধুলা। ধানমন্ডি মাঠসহ সারা দেশে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা খেলার মাঠগুলো আসলে সর্বসাধারণের এজমালি মালিকানাধীন সম্পত্তি। এর ওপর ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর বা কোম্পানির মালিকানা চাপিয়ে দেওয়া লুণ্ঠনেরই আরেক নাম।
আলমগীর কবির বলেন, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে শহীদ আনোয়ারা পার্ক ছিল এলাকার মানুষের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। একসময় হাজারো মানুষ ছোট্ট উদ্যানটিতে হাঁটাচলা করতো, শিশুরা খেলতো, কম আয়ের মানুষ ক্লান্তি দূর করতে জিরিয়ে নিতো। কিন্তু মেট্রোরেলের অফিস এবং অবকাঠামো রাখায় বন্ধ রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি বিজড়িত পার্কটি। বছর কয়েক আগেও ফার্মগেটের গা-ঘেঁষা ছোট্ট এ উদ্যানটি ছিল সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা। সেখানে এখন রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।
তিনি আরও বলেন, পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের ফলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন হয়েছে। পার্কের গাছ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক স্থাপনা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গুলশান মডেল টাউনের নকশা অনুযায়ী, ৮ দশমিক ৮৭ একর আয়তনের পার্কটির অবস্থান গুলশান ২ নম্বরের ১৩০-এ প্লটে। আগে নাম ছিল গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নতুন নামকরণ হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক। পার্কের ৫ দশমিক ৫৪ একর জায়গা অনেক দিন ধরে ইয়ুথ ক্লাবের দখলে।
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অবস্থান ওসমানী উদ্যানের। ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর গুলিস্তানের কাছে ওসমানী উদ্যানে ‘গোস্বা নিবারণী’ পার্কের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। ১০ মাসেই সব কাজ শেষ করার কথা। ৬ বছর চলে গেলো তবু তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি।
যুব সমাবেশে গ্রিন ভয়েসের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো—দেশের সব খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যানে স্থাপনা বন্ধ করতে হবে; শহীদ আনোয়ারা উদ্যানসহ দেশের সব খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে; পান্থকুঞ্জ পার্কের অরণ্য ফিরিয়ে দিতে হবে; কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিল করতে হবে; সবুজে ঘেরা ওসমানী উদ্যান পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে; তাজউদ্দীন পার্কের ইজারা বাতিল করতে হবে; সব মাঠের অভ্যন্তরের নতুন-পুরাতন সব স্থাপনা অপসারণ করতে হবে এবং খেলার মাঠ উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ বাস্তবায়ন করতে হবে।
যুব সমাবেশে গ্রিন ভয়েস’র বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫
এসসি/এমজেএফ