ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিএসএফের বেড়া নির্মাণচেষ্টা: সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
বিএসএফের বেড়া নির্মাণচেষ্টা: সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে  বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গত তিনদিন ধরে উত্তেজনা চললেও গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে।  

তবে দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের পরও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বাধা উপেক্ষা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টার কারণে এখনও অস্বস্তি রয়েছে সীমান্তবাসীর মধ্যে।

 

গত সোম ও মঙ্গলবার এ নিয়ে দুই দফা এবং বুধবার দুপুরে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে দুই দফাসহ মোট চার দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিন বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকের পর স্বস্তি ফেরে সীমান্তে।  

ভারতের মাহদীপুরে বুধবার সন্ধ্যায় এ বৈঠক হয়।  

এর আগে সোম ও মঙ্গলবার বৈঠকে আর বেড়া নির্মাণের চেষ্টা না করার আশ্বাস দিলেও বিএসএফ সে কথা অমান্য করে কাজ করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয় সীমান্তে।  

এদিকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তে অতিরিক্ত জোয়ান দুই দেশই সরিয়ে নিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের উভয় সীমান্তেই তৈরি করা বাংকারগুলো রয়ে গেছে। নির্মাণ সামগ্রীর কিছু অংশ সরানো হলেও কিছু অংশ পড়ে রয়েছে।  

বিজিবি ও বিএসএফ সতর্ক অবস্থায় নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।  

আর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে সীমান্তবাসীদের যে জটলা ছিল, সেটি আর নেই। সব মিলিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত দেখা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের চৌকা সীমান্তের ওপারে সুখদেবপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৭৭/১ এস ও ২ এস এলাকায় নোম্যানসল্যান্ড থেকে ৫০ গজ এগিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশের দিকে বিএসএফ প্রায় ছয় মাস আগে কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে সীমান্ত পিলার ১৭৭/২-এস থেকে নোম্যান্সল্যান্ডের আনুমানিক ১০০ গজ ভারতের ভেতরে বাংলাদেশ সাইডে চৌকা মাঠ এলাকার জিআর নম্বর ০৪৭৩৭২ এমএস ৭৮ ডি/২ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য ভারতের ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সবদেলপুর ক্যাম্পের উদ্যোগে মাটি খনন শুরু করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে বিজিবির চৌকা সীমান্তের টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সেই কাজে বাধা দেয়। বৈঠকের পরও মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বিএসএফ আবার মাটি খননের কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে বিজিবি গিয়ে বাধা দেয়। তবে বিএসএফ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নির্মাণকাজ আবার শুরু করে। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। ভারতীয় নাগরিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরাও সীমান্তে জড়ো হতে থাকেন। সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে বিজিবি ও বিএসএফ।  

বুধবার সকালে আবার সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে বাধা দেয় বিজিবি।  

এদিকে সীমান্তে বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় বুধবার স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্ষোভ জানান এবং বিজিবির সঙ্গে তারাও দিনব্যাপী সীমান্তে অবস্থান নেন।  

চৌকা সীমান্তের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মইন আহম্মেদ জানান, এ স্থানে নদীর পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার সুযোগ পেয়ে বিএসএফ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের চেষ্টা আমরা সীমান্তবাসী সফল হতে দেব না। এক ইঞ্চি জমিও তাদের দখল করতে দেওয়া হবে না। আইন অনুসারী নোম্যান্সল্যান্ড ছেড়ে তাদের বেড়া দিতে হবে।

বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. বাদশাহ জানান, গত তিনদিনে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে সীমান্তবর্তী জমিগুলোর তিন বিঘা জমির ভুট্টা, গম এবং সরিষা নষ্ট হয়েছে। বিএসএফের বাড়াবাড়ির কারণে সীমান্তে লোকসমাগমের কারণেই ফসলগুলোর ক্ষতি হয়েছে।  

চৌকা সীমান্ত এলাকার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমীন জানান, বিএসএফ স্থানীয় ভারতীয়দের জমায়েত করে সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করায় বাংলাদেশিরাও সীমান্তে জড়ো হন। সীমান্তের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।  

এদিকে বিজিবির একটি সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরের পতাকা বৈঠকের পরপরই বিকেলে সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের বিপরীতে মাহদীপুরে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বিজিবি-বিএসএফের সৌজন্য বৈঠক হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে আলোচনার মাধ্যমে বিএসএফ বা বিজিবির হেড কোয়ার্টারের চিঠি বা অনুমতি ছাড়া সীমান্তে কোনো ধরনের বেড়া কিংবা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পাশাপাশি উভয় দেশের বাহিনী তাদের নিজ নিজ ভূখণ্ডের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত জনসাধারণকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেবে।  

বৈঠকে ভারতের পক্ষে মালদা সেক্টরের ডিআইজি তরুণ কুমার গৌতমের নেতৃত্বে ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার সুরাজ শিংসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির রাজশাহী সেক্টরের কর্নেল মো. ইমরান ইবনে রৌউফ।

এ ব্যাপারে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, সফলভাবে সভা সম্পন্ন হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপাতত বিএসএফ অতিরিক্ত জনবল ও বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখবে। বিজিবির প্রস্তাব জানানো হয়েছে তাদের। তারা জানিয়েছে যে তারা আমাদের আপত্তির বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। সেখান থেকে জানার পর বোঝা যাবে, ভারত সীমান্ত বেড়া নির্মাণ করবে কি না। তবে বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।  

যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি সতর্কভাবে অবস্থান করছে। উভয় দেশের স্বাভাবিক টহল অব্যাহত থাকবে। তবে উভয়দেশই অতিরিক্ত জোয়ান এবং সীমান্তবাসীকে সরিয়ে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৭৭/১ এস ও ২ এস এলাকায় পাঁচ/ছয় মাস আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ড থেকে ৫০ গজ এগিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (আন্তর্জাতিক শূন্যরেখার ১০০ গজের মধ্যে) ভারত একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে। সেই রাস্তার পাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার সময় এ উত্তেজনা তৈরি হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।