ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনও বিলাপ করছেন মা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনও বিলাপ করছেন মা

ব‌রিশাল: দাফনের পর আরও তিনটি দিন পার হয়ে গেলেও আদরের সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। কোনোভাবেই যেন নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারছে না।

গত ২০ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন তিনি। সোমবার সকালে সরকার পতনের এক দফা দাবিতেও মিছিল করেছিলেন। সরকার পতনের মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যান জিহাদুল ইসলাম জিহাদ।

জিহাদ বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজিরচর গ্রামের মোশাররফ হোসেন পাইকের ছেলে।

নিহত জিহাদের বাবা মোশাররফ হোসেন পাইক জানান, তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল জিহাদুল ইসলাম। সে ঢাকার কাজলার কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ২০ জুলাই থেকে মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন। সোমবার সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে যাত্রাবাড়ী থানায় ভারতীয় পুলিশ আছে এমন গুজবে কিছু আন্দোলনকারী থানা ঘেরাও করতে যায়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় জিহাদ। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টায় মুলাদীর দক্ষিণ কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে জিহাদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবারের ছোট সন্তানকে হারানোয় জিহাদের বাড়িতে এখনও চলছে শোকের মাতম।

নিহত জিহাদের বড় ভাই রিয়াদ হোসেন বলেন, পরিবারের ছোট সন্তান হওয়ায় সবার অনেক আদরের ছিল সে। পড়ালেখা করে পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল জিহাদ। আর সেই পুলিশের গুলিতেই প্রাণ হারাল। তাকে হারিয়ে মা পাগলের মতো বিলাপ করছেন। বাবাও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন এখনও।

নিহত জিহাদের মামা মো. রফিকুল ইসলাম ঢালী জানান, ছোট সময় থেকে অনেকটা প্রতিবাদী ছিলেন জিহাদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেয় সে। বাবা-মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। সর্বশেষ পুলিশের গুলিতে মারা যায়।

এদিকে সরকার পতনের কয়েকঘণ্টা আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় আচমকা গুলিতে নিহত হয়েছে বরিশালের আরেক সন্তান রাকিব হোসেন রাজিব। নিহত রাজিব বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেনের ছেলে।

রাজিবের সহপাঠী হাসানুল বান্না জানান, ‘রাকিবসহ তারা তিন বন্ধু একদম শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। রাকিব ছিল যেমন মেধাবী তেমনই সাহসী। সবসময় মিছিলের সামনের সারিতে থাকতে পছন্দ করতো। সে রাজনীতি করতো না। তবে প্রায়ই বলত এই দুঃশাসন থেকে হয় স্বাধীন হবো নতুবা শহীদ হবো। ’

নিহত রাজিব বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে বাবুগঞ্জের খানপুরা আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস এবং বরিশালের ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমা করে বিএসসির জন্য ভর্তি হন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে।

রাকিবের বড় ভাই আবুল কালাম জানান, রাকিবকে দুইটা গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। দুইটা গুলিই তার পেটে বিদ্ধ হয়। তবে তলপেটের গুলিটি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ’ গত মঙ্গলবার সকালে মানিককাঠি বাজারে জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।