ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলায় উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলায় উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসী

নওগাঁ: গ্রাম বাংলার নানা উৎসব-পার্বণে একসময় বিনোদনের খোরাক যোগাতো লাঠিখেলা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে।

এই খেলাকে ধরে রাখতে নওগাঁয় হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁর সদর উপজেলা শৈলগাছী ইউনিয়নের গুমারদহ এলাকায় এই লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গুটার বিলে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।

এদিকে, লাঠি খেলা ও নৌকাবাইচের আয়োজন ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছিল। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা দেখেও উচ্ছ্বসিত গ্রামবাংলার মানুষেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখতে দুপুরের পর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে নানা বয়সী মানুষ। একটি বাড়ির আঙিনায় স্থানীয় কয়েকজন লাঠিয়াল একত্রিত হন। সেখানে লাঠিয়ালদের গানের তালে তালে ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

খেলায় ঢাকের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রথমে শারীরিক কসরত ও অঙ্গভঙ্গি দেখান। বেশ কিছুক্ষণ চলে এই কসরত। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। দুইজন লাঠিয়াল শব্দের তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একে অন্যের ওপর। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চলে প্রতিপক্ষকে হারানোর অদম্য চেষ্টা। এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা।

জিল্লুর রহমান নামে এক দর্শক বলেন, অনেক ছোট থাকতে একবার লাঠিখেলা দেখেছিলাম। অনেক দিন পর আজকে দেখে খুবই ভালো লাগলা। আজকের বিকেলটা সত্যি অনেক সুন্দর কাটল আমার।

আরেক দর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখতে পেতাম। কিন্তু এখন সেসব খেলা হারিয়ে গেছে। অনেকদিন পরে আজকে লাঠি খেলা দেখলাম। বেশ ভালো লাগছে।

সুমাইয়া আক্তার নামে ১০ বছরের এক স্কুলশিক্ষার্থী জানায়, এই প্রথম লাঠিখেলা দেখলাম। খুব আনন্দ লাগছে। বাবার সঙ্গে এসেছি। লাঠিখেলা দেখে নৌকাবাইচ দেখবো।

লাঠিয়াল আব্দুর রহমান বলেন, আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গিয়ে লাঠি খেলতাম অনেক জমজমাট হতো। লাঠি খেলে আমরাও যেমন আনন্দ পেতাম গ্রামের মানুষও আনন্দ পেতো। কিন্তু আগের মতো এখন আর এই খেলার আয়োজন হয় না। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাইদের নিয়ে এই খেলাটি ধরে রাখতে বছরে দুই-একবার খেলে থাকি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে আবারও এই খেলা আগের মতো চালু হবে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কালের বিবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে বিনোদনের উৎস গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ। এসব খেলাধুলাকে আবারও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন। লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি দর্শকরাও মুগ্ধ হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।