ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুলের চাবি নিয়ে লাপাত্তা প্রধান শিক্ষক, বই পায়নি শিক্ষার্থীরা

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
স্কুলের চাবি নিয়ে লাপাত্তা প্রধান শিক্ষক, বই পায়নি শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজ

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রয়েছে রুপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বই উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বই নিতে আসা ও ভর্তি হতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া সেশন ফি, ভর্তি ফিসহ ৭০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিদ্যালয়টির বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, টাকা না দিলে ভর্তি ও বই মিলছে না শিক্ষার্থীদের।

সরকারি বন্ধ না থাকলেও স্কুল বন্ধ করে চাবি নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক। এমনটাই দাবি স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির।

সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিসসহ সব কক্ষ তালা দেওয়া। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বই নিতে এসে শিক্ষকদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ সময় বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ ও সভাপতি কাইয়ূম মোল্যাকে বিদ্যালয়ের মাঠে ও বাহিরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

জান্নাতুল ও সাদিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন পাঁচটি বই পেয়েছি। আজ সোমবার স্কুলে এসে দেখি স্কুলের অফিসসহ সব রুম তালা দেওয়া।

অষ্টম শ্রেণীর মিম বলেন, আমাকে শুধু বিজ্ঞান বই দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো বই পাইনি।

উপজেলার কদমী গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাগর মিয়া বলেন, ছেলে হামিম মিয়াকে ছষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানোর জন্য এসেছি। কিন্তু শিক্ষকরা না থাকায় ভর্তি না করে ও বই না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।

ডহরনগর গ্রামের মোরশেদা বেগম বলেন, তার জমজ দুই ছেলে অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠেছে। প্রধান শিক্ষক বলেছেন, ভর্তি ও সেশন ফিসহ ৭০০ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে ভর্তি হতে পারবে না।

এ ব্যাপারে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন কিছু বই দিয়েছি। কিন্তু সোমবার (২ জানুয়ারি) ভোরে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের সব রুম তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে গেছেন। যার কারণে আজ আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে বই দিতে ও ভর্তি নিতে পারছি না।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাইয়ূম মোল্যা বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা সকালে স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন। জানতে পেরে সব শিক্ষার্থীকে টাকা দিতে নিষেধ করি। পরে তিনি স্কুল থেকে চলে যান।

তিনি আরও জানান, এ বছর সেশন ফিসহ কোনো কিছুই নির্ধারণ করা হয়নি। যাবতীয় ফি পরে নেওয়া হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা মানছেন না। এছাড়া অক্টোবরের ৩০ তারিখে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মোল্যাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বই দেওয়ার কথা বলে আমি কারও কাছে থেকে টাকা নেই নি। তবে যারা পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছেন তাদের কাছে থেকে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।  

স্কুল তালা থাকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অফিসের জরুরি কাজে আমি ঢাকায় এসেছি। স্কুলের চাবি আমার কাছে নেই।

বরখাস্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ তিনজন সদস্য। কিন্তু, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির অন্য ৯সদস্যই আমার পক্ষে সাক্ষর করেছেন। তাই আমি অবৈধ নই।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুলটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে একটু অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। যা ঢাকা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত জানেন। আমরা বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে আমি আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) স্কুলটি পরিদর্শনে যাবো।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।