ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে জুয়া ঘৃণ্য কাজ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে জুয়া ঘৃণ্য কাজ ছবি: সংগৃহীত

জুয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বলা চলে। নবী করিম (সা.)-এর আগমনের সময় মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন হাউজি, টাকা বাজি রেখে ঘোড় দৌড় ও তাস খেলা ইত্যাদি। এগুলো সবই হারাম।

ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি অভিজাত ক্লাবে আইন বহির্ভূতভাবে ও টাকার বিনিময়ে হাউজি, ডাইস ও তাস খেলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (০৪ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রুলে অভ্যন্তরীণ খেলার নামে কার্ড, ডাইস ও হাউজি খেলার বেআইনি ব্যবসা আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ এবং পাবলিক গ্যাম্বলিং আইন অনুসারে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা অবৈধ।

স্বাভাবিকভাবে সমাজে জুয়া খেলাকে ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ হিসেবে দেখা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতেও তা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ হারাম।

জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই স্পষ্ট নয়।

জুয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বলা চলে। নবী করিম (সা.)-এর আগমনের সময় মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন হাউজি, টাকা বাজি রেখে ঘোড় দৌড় ও তাস খেলা ইত্যাদি। এগুলো সবই হারাম।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শুধু নাম পরিবর্তনের কারণে বস্তুর মূল প্রকৃতি এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে হুকুম প্রযোজ্য ছিল, আধুনিক কালের জুয়ার ক্ষেত্রেও সেসব হুকুম প্রযোজ্য।  

ইসলামি শরিয়তে জুয়া হারাম। একাধিক আয়াত ও হাদিসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও নামাজ আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না। ’ -সূরা মায়িদা: ৯০-৯১

এ আয়াতে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলোকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। আয়াতে এগুলো থেকে দূরে থাকার হুকুম করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এতে পরষ্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু এর দ্বারা শয়তান মানুষকে নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। কাজেই মদের ন্যায় জুয়াও হারাম। এর হারাম হওয়ার বিষয়টি কোরআনের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যদি কেউ এই হুকুমকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে।

এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি তার সাথীকে বলে, এসো জুয়া খেলব। তাহলে (এ কথার অপরাধের কারণে) সদকা করা তার ওপর অপরিহার্য।

অতএব, জুয়াকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যেমন কোনো মুসলমানের জন্য জায়েয নেই, তেমনি একে খেলা, মনের সান্ত্বনা, তৃপ্তি ও অবসর বিনোদনের উপায়রূপে গ্রহণ করাও বৈধ হতে পারে না।  

এ ছাড়াও জুয়া খেলায় বহু অপকারিতা রয়েছে। যেমন- এ খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতি সাধিত হয়।  

জুয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে উপার্জনের ব্যপারে অলস, উদাসীন ও নিস্পৃহ হয়ে যায়। জুয়ার জয়-পরাজয় মারামারি এমনকি হত্যাকান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। জুয়াড়ি ব্যক্তি জুয়ার নেশায় মাদকাসক্তের ন্যায় মাতাল থাকে সর্বদা। এ কারণে সে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও আত্মীয় কারোর খবর রাখতে পারে না। জুয়াড়ি তার পরিবার-পরিজনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে না, ছেলেমেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত বানাতে পারে না। বরং তারাও পিতার দেখাদেখি ওই সর্বনাশা খেলায় আংশগ্রহণের প্রয়াস পায়। এভাবে জুয়াড়ির পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।

জুয়াড়ির মেজাজ সর্বদা রুক্ষ্ম থাকে। আর রুক্ষ্ম মেজাজের মানুষগুলো হয় নিষ্ঠুর। জুয়ায় বিজয়ী আরও লাভের নেশায় মাতাল হয়ে উঠে‍। আর পরাজিত ব্যক্তি প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠে। তাই স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিবাদ, ঝগড়া ও অশান্তি সর্বদা লেগে থাকে। বর্তমানে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা বা স্বামী কর্তৃক স্বামী হত্যা- এ জাতীয় লোমহর্ষক ঘটনার পেছনে জুয়ার প্রভাব লক্ষণীয়।  

জুয়া খেলায় মানুষ আল্লাহ বিমুখ এবং নামাজ-রোজা তথা ইবাদত-বন্দেগির ব্যপারে চরম উদাসীন হয়ে যায়। কেননা জুয়াড়ির একমাত্র ধ্যান-ধারনা কেমন করে আরও টাকা বানানো যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কাজেই জুয়ার এ সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।

সমাজে লটারি, হাউজি, বাজি ধরা, চাক্কি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ থেকে শুরু করে প্রভৃতি নামে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন রয়েছে। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও বসছে জুয়ার আসর। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মাদকের মতোই জুয়ার ছোবল এখন দৃশ্যমান। এমতাবস্থায় দেশের সচেতন অভিভাবকদের প্রত্যাশা, অনৈতিক এসব জুয়ার আসর বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।  

সব ধরনের জুয়াবাজি অবৈধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হারাম। হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয় না। তাই সব ধরনের জুয়াবাজি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।