ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সংলাপ: বিশিষ্ট নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রসঙ্গে

ড. মঞ্জুরে খোদা, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
সংলাপ: বিশিষ্ট নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রসঙ্গে

যারা মনে করেন প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ করানো গেলে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা একটা সমঝোতা ও সমাধানের দিকে যাবে তাদের সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমার সহানুভূতি থাকলেও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

প্রথম বিষয় হচ্ছে, দুই নেত্রী বা দলের চাওয়া-পাওয়া পরস্পরের অজানা কিছু না! এবং এই প্রশ্নে তাদের অনমনীয় অবস্থানের ধারাবাহিক বিভিন্ন পর্বের একটি অংশ হচ্ছে বর্তমান পরিণতির এই পর্যায়।

তাই যদি হয় তাহলে তাঁদের সংলাপ আকাঙ্খার এই উত্থাপন কতটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ?

দ্বিতীয়ত, যারা এই বিষয়ের উদ্যোগ/আহ্বানের কথা বলছেন, তারা কি মনে করছেন বাস্তবতা ও প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধিতে নেতা-নেত্রীরা অক্ষম? সেটাই যদি হয় তাহলে তাঁদের কেন মনে হলো- উনাদের আহ্বান বা আকুতি বোঝার মত জ্ঞান-বোধ-গুরুত্ব তাঁদের আছে বা হবে?

তৃতীয়ত, বাস্তবে এই আহ্বান ও আকাঙ্খা কখন গুরুত্ব পায়? রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সাধারণ পাঠ হচ্ছে, যখন দেশের ভেতরে এবং/অথবা বাইরের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও কোন প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি যাদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা আছে, তাদের প্রভাব যদি এই আকাঙ্খার সাথে যুক্ত হয় তাহলেই সেই চাওয়াটি ঐ পর্যায়ের গুরুত্বের বিবেচনায় আসে। এখন প্রশ্ন, সেটা কি এই শিক্ষিত বিদগ্ধ জনদের অজানা..?

তাহলে কেন এই নাগরিকরা রাজনীতিকদের গাত্রে সুঁড়সুড়ি দিয়ে এমন পুলকের সৃষ্টি করেন? রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নতিতে ব্যক্তি নাগরিকদের ভূমিকা অস্বীকার করছি না, কিন্তু একটি উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে সেটা সম্ভব। উনারা যদি কেউ ভারতের আন্না হাজারের মত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব রাখতেন তাহলেও সেখানে কিছু আশা করা যেত, তা না হলে এই সব কথা হবে কেবলি ফলহীন-শব্দদূষণ বৈ অন্য কিছু নয়।

সংলাপ হচ্ছে কোন অচলাবস্থা অবসানের বা পথ খুঁজে বের করার একটা সমঝোতামূলক প্রক্রিয়া। কিন্তু ১৮০ ডিগ্রী বিপরীতিমুখী কোন অনড় অবস্থানের পরিস্থিতিতে এই বিবেচনা কতটা সমীচীন? পক্ষগুলোর উভয় অথবা অন্তত একপক্ষকে সমঝোতার ইঙ্গিতসহ সম্ভাব্য একাধিক ফর্মুলা ঘোষণা করলে এর একটা ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে, কিন্তু এখানে তার সামান্যতমও কিছু ঘটেছে? সমঝোতার দুইটি দিক আছে একটি হচ্ছে নীতির দিক, আরেকটি কৌশলগত। প্রথমে নীতিগত অবস্থানের বিষয়ে একটা সিন্ধান্তের ক্ষেত্র তৈরি করা তারপর কৌশলগত প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপের সুযোগ থাকে/আসে। যেখানে উভয় শর্তই অনুপস্থিত, সেখানে এই চাওয়া কতটা যৌক্তিক!?

সংলাপই যদি এরা করবে সেখানে কি তাদের কোন দূতিয়ালির দরকার আছে? উভয় দলের অনেক নেতাই আছেন তাদের রাজনৈতিক অবস্থান যাই থাক না কেন, এমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে যারা সংলাপ ও সমঝোতার কৌশলগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন এবং সেই জন্যই বলছিলাম সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া-না হওয়া কোন পবিত্র পুরুষ ও নির্মল আহ্বানের অভাবে/অপেক্ষায় হচ্ছে না, বিষয়টি এমন না। এটি সবারই জানা, দীর্ঘ অগণতান্ত্রিক ধারা ও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে একটি সমঝোতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আর সেটা হয়নি বলেই দল ও রাজনীতির এই অসুস্থ ও বৈরী অচলাবস্থা।

তাহলে কি এই পরিস্থিতিকেই আমরা নিয়তি হিসেবে মেনে নেব? না, অবশ্যই না কোনভাবেই না। এখান থেকে আমরা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করতে পারি, যদি নাগরিক, পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে একটি ব্যাপক চাপের ক্ষেত্র তৈরি করা যায়। সেই পরিস্থিতি হতে হবে থমকে দেয়ার মত দৃশ্যমান ও শক্তিশালী গণজাগরণ। বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকর প্রতিরোধের ধারা গড়ে তোলাই হতে পারে সমঝোতার রাজনীতির আকাঙ্খা তৈরির ভিত্তি। এবং গড়ে উঠবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি ও প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক ধারার সংস্কৃতি। সেই পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে যদি তাদের/বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা দৃশ্যমান হতো এবং জনগণের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারত তাহলে এই 'উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর চেয়ে' অনেক বেশি গুরুত্ব পেতো।

লেখকঃ ড. মঞ্জুরে খোদা, গবেষেক ও খণ্ডকালীন প্রক্টর, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, কানাডা

বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।