ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিপিএম পদক পেলেন বরগুনার এসপি বিজয় বসাক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৮
বিপিএম পদক পেলেন বরগুনার এসপি বিজয় বসাক বরগুনার এসপি বিজয় বসাক

বরগুনা: সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি আর নানামুখি উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বিপিএম পদক পেয়েছেন বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বাসক।

যৌন হয়রানি, জঙ্গিবাদ ও মাদক বাণিজ্যসসহ সব রকম অপরাধ নির্মূলে যার সাহসী ভূমিকা ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। অসংখ্য ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারের সম্মান পাওয়ার পর সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন বিপিএম পদক।

মাদক থেকে দূরে থাকার আহবান নিয়ে পুলিশ সুপার নিজেই রচনা করেছেন একটি স্লোগান-‘যে মুখে ডাকি মা সে মুখে মাদককে বলি না’। এ স্লোগানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিল্পীদের সুরে রচনা করা হয়েছে মাদকবিরোধী সঙ্গীত। মাদকবিরোধী এ সঙ্গীত ও স্লোগানকে সামনে রেখে পাড়ায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজ ও কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ, মাদক ও যৌন হয়রানিসহ সব রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনা জেলা পুলিশ।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে তার উদ্যোগে বরগুনার ছয়টি উপজেলার ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীকে জঙ্গিবাদ, মাদক ও যৌন হয়রানিসহ সব রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

১২ লাখ মানুষের নিরাপত্তায় মাত্র ছয়শ’ পুলিশ পর্যাপ্ত নয়। নানা সীমাবদ্ধতা ভাবনায় রেখে জেলার চারটি পৌরসভাসহ ৪২টি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং-এর স্থানীয় কমিটি। কমিউনিটি পুলিশিং এবং গ্রাম পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলতে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশিং এর তৃণমূল নেতৃবৃন্দকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত ধন্যবাদপত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দিয়ে আসছেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এসব নানামূখি উন্নয়ন প্রচেষ্টার কারণে বরগুনার কমিউনিটি পুলিশিং এবং গ্রাম পুলিশিং কার্য্যক্রম বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গতিশীল বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য একটি মাত্র জেনারেল হাসপাতাল। নজিরবিহীন চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি এখানে রয়েছে জরুরি রক্তের সংকট। নিভৃত গ্রাম থেকে আসা অধিকাংশ রোগীদের চিকিৎসাসেবা পেতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যেসব ধকল পার হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সংকট এটি। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের রোগীদের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে ২০১৬ সালে স্থাপন করা হয় পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক।

মায়ের কোলে শিশুর মনুমেন্ট জেলার ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্যের রক্তের গ্রুপ এবং একাধিক জরুরি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করা হয়েছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে। পুলিশ লাইফ ব্লাড ব্যাংক জরুরি রোগীদের জন্য এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা পুলিশের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, বাংলাদেশের যেকোনো জেলার চেয়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবন এবং পারিবারিক কলহের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এখানে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। সেসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা হয় নারী নির্যাতনের। মাসের পর মাস ধরে চলে মামলা। ভেঙে যায় সংসার। এসব দরিদ্র, অসহায় এবং নির্যাতিত নারীদের ভোগান্তি লাঘবে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের প্রচেষ্টায় স্থানীয় নারী নেত্রীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি ভিন্ন ধর্মী প্লাটফর্ম। নাম দেয়া হয় ‘জাগোরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নির্যাতনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে বরগুনার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার শতাধিক দরিদ্র অসহায় নারী। ‘জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্র’ এখন বরগুনার অসহায়, দুস্থ ও নির্যাতিত নারীদের আস্থার প্রতীক।

থানা হাজতে নারী হাজতিদের জন্যে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সেনিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের প্রথা চালু করেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এছাড়া  নারী পুলিশ ও পুলিশ পরিবারের প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতায় পুলিশ সুপার বিজয় বসাক নিজ উদ্যোগে প্রজনন স্বাস্থসেবা বিষয়ক একাধিক কর্মশালাসহ বহু সভা ও সেমিনার আয়োজন করে আসছেন। কর্মশালায় বরগুনা জেলায় কমর্রত সব নারী পুলিশসহ পুলিশ পরিবারের নারী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় পাঁচবার বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হন বিজয় বসাক। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ ম্যাডেল (পিপিএম) এবং ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুইবার তিনি অর্জন করেন আইজি ব্যাচ ও সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে পেলেন ‘(বিপিএম)-সেবা’ পদক। বরগুনায় যোগদানের পর থেকেই বরগুনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি শক্ত হাতে।

নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ভবন এবং এর ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও আকর্ষণীয় পরিবর্তন এনেছেন তিনি। মূল ক্যাম্পাসে মায়ের কোলে শিশুর একটি দৃষ্টিনন্দন মনুমেন্ট তৈরি করেছেন বিজয় বসাক। নিজ প্রচেষ্টায় বরগুনা জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রতিবছর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিসিএস উত্তীর্ণ কৃতি তরুণদের সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ জুন পুলিশ সুপার হিসেবে বরগুনায় যোগ দেন বিজয় বসাক। জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানামুখি সৃজনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করে তোলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ০৫ জানুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।