বরিশাল: সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর সমঝোতায় অবরোধ তুলে নিয়েছে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন।
তিনি বলেন, বিএম কলেজের এক ছাত্রীর কাছ থেকে বাসের সুপারভাইজার বেশি ভাড়া আদায় করে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানায়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও বাস মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্তের পরই শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে এবং বর্তমানে রূপাতলী থেকে সব রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
একই কথা জানিয়েছেন সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আলোচনায় যেটা বুঝলাম তাতে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। কোনো বাস হাফ ভাড়া নিলেও আবার কোনো বাসের সুপারভাইজার-হেলপার তা নিতে চায় না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং মাঝ পথে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ছাত্রদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে এখন আলোচনার মাধ্যমে মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে বলে জানিয়েছে। তবে যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর সমঝোতার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হাসান রাজু জানান, তাদের ৮ দফা দাবির বিষয়গুলোর সঙ্গে বাস শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতারা একমত হয়েছেন। সব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসও দিয়েছেন তারা। আমরা চাই না আমাদের কোনো বোন আর হেনস্থা হোক।
তিনি বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পরপরই রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন এবং তারাই যানবাহন চলাচলে সহায়তা করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দিনের বেলা বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী রাজাপুর থেকে তাওহিদ পরিবহনের বাসে করে বরিশাল নগরে আসছিলেন। পথিমধ্যে ভাড়া নিয়ে বাসের স্টাফদের সঙ্গে শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটি হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করেছে বাসের হেলপার ও চালক। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি টিম বরিশাল রূপাতলী বাস মালিক সমিতিতে গেলে সেখানে তাদের ওপরে হামলা করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা দোষীদের বিচার ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে রূপাতলী গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে বাস শ্রমিকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সড়ক অবরোধ করে তাওহীদ পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুর করেন এবং শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান। এতে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হয় এবং কম বেশি কয়েকজন আহত হন।
এদিকে প্রতক্ষ্যদর্শী শিপন জানান, রুপাতলী গোল চত্বর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি শুরু করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার উদ্যোগ নেন। তবে এর মাঝেই বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা, বরিশাল-বরগুনা, বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর, বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে বাসসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ওইসব জেলা থেকে বরিশাল শহরের উত্তরাংশ ও ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সবমুখি রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এমএস/আরবি