ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জীবন বাজি রেখে কুখ্যাত ছিনতাইকারীকে ধরলেন এএসআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
জীবন বাজি রেখে কুখ্যাত ছিনতাইকারীকে ধরলেন এএসআই আহত এসআই মো. মেসবাহ উদ্দিন ও গ্রেপ্তারকৃত চাঁদাবাজ নাফিজ

ঢাকা: ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছেন ডিএমপির ভাটারা থানার এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিন।

গ্রেপ্তারকৃতের নাম- মো. মোবারক হোসেন নাফিজ (২২)।

তিনি ভাটারা এলাকার ওয়ারেন্টভুক্ত চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও কুখ্যাত ছিনতাইকারী।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

তিনি জানান, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টায় ভাটারা থানাধীন জে-ব্লক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ভাটারা থানা এলাকায় চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারি গ্রেপ্তারে উদ্দেশে বিশেষ অভিযান চলাকালে থানার টহল টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে ভাটারা এলাকার ওয়ারেন্টভুক্ত চিহ্নিত চাঁদাবাজ মো. মোবারক হোসেন নাফিজ তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ভাটারা থানাধীন জে-ব্লক বারিধারা রোড নং ১/এ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান থেকে ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভাটারা থানার এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনসহ থানার টহল টিম দ্রুত সেখানে পৌঁছায়। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করলে গ্রেপ্তারকৃত নাফিজ এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনকে সুইচ গিয়ার চাকু ও হাতে থাকা স্টিলের কাটা চামচ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তিনি বাম চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে অনড় থেকে তিনি চাঁদাবাজ নাফিজকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। এ সময় নাফিজের সহযোগী ৪-৫ জন দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের সময় নাফিজের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি স্টিলের রক্তমাখা কাটা চামচ, বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত মোট এক হাজার ৭৫০ টাকা উদ্ধার ও গ্রেপ্তারকৃত নাফিজের পরিহিত রক্তমাখা শার্ট জব্দ করা হয়।  

তিনি আরো জানান, আহত এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনকে প্রথমে বারিধারার স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আহত মেসবাহ উদ্দিনকে দেখতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।  

ডিসি আরো জানান, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাংলাদেশ বাহারুল আলম এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি তার এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাকে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। এছাড়া ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের প্রশংসা করেন এবং তা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন এবং তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।  

তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত নাফিজসহ তার পলাতক অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ভাটার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন আহত পুলিশ সদস্য মেসবাহ।

ভাটারা থানা সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত নাফিজ ভাটারা এলাকার একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী। সে ও তার সহযোগীরা কিছুদিন যাবৎ ভাটারা থানা এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, নাফিজ ভাটারা থানার একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।  

আহত এএসআই মেসবাহ উদ্দিন বলেন, জনগণের জান-মাল রক্ষায় সবসময় আমি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। গতকাল প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সংবাদ পেয়ে চিহ্নিত চাঁদাবাজ মো. মোবারক হোসেন নাফিজকে গ্রেপ্তারে ছুটে যাই। সে একজন ভয়ংকর ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ। আমার চোখের উপর গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে গ্রেপ্তারে আমি অনড় ছিলাম। অবশেষে পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। ভবিষ্যতেও যে কোনো পরিস্থিতিতে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বদা তৎপর থাকবো।  

গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার নিবিড় তদন্ত ও পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।