ঢাকা, বুধবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

২৩ বছর পর কারাগার মুক্ত হয়ে সরকারি বাড়ি পেলেন ইসমাইল 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
২৩ বছর পর কারাগার মুক্ত হয়ে সরকারি বাড়ি পেলেন ইসমাইল  ইসমাইলের হাতে বাড়ির চাবি আর টাকা তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক 

নওগাঁ: ২৩ বছর সাজা ভোগ করে ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন।  

একটি মামলায় ১৯ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন ইসমাইল।

দীর্ঘ সময়ে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। তবে জেলের ভেতরেই গড়ে তোলেন আরেক পৃথিবী। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় মুক্তির পর নতুন বাড়ি, ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজি পেয়েছেন ইসমাইল।  
 
ইসমাইলকে পুনর্বাসন করতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের উদ্যোগে সবজি বিক্রির জন্য একটি ভ্যান উপহার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মূলধন হিসেবে নগদ টাকা ও বসবাসের জন্য আশ্রয়নের একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে তাকে।
 
ইসমাইল হোসেন নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর।  

তিনি বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ১৯৯৯ সালে জড়ানো হয় তাকে। সেই মামলায় ১৯ বছর বয়সে যাবজ্জীবন হয় তার। এরপর থেকে নওগাঁ জেলা কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
 
তিনি আরও বলেন, মামলা চলাকালে আদালতে তাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উকিল খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে একসময় বিচারের আশা ছেড়ে দেন স্বজনরা।
 
সে সময় ইসমাইলের স্ত্রী ও একটি ছেলে সন্তান ছিলেন। পরে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। ২৩ বছরে অনেক কিছু ঘটে গেছে তাদের পরিবারে। একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসত না।  

দায়িত্বশীল আচরণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলার কারণে কারাগারে সুনাম ছিল ইসমাইলের। কারাগারে দর্জির কাজ করতেন তিনি। বন্দি জীবনেই শিখেছেন সেলাই। পরে ২৩ বছরে দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠেন ইসমাইল। কারারক্ষী ও বন্দিদের পোশাক তৈরি করে দিতেন। পরে সেলাই খুব কমই করতেন, ছিলেন কাটার মাস্টার।
 
কিন্তু আগের মতো আর চোখে ভালো দেখতে পান না। তাই দর্জির কাজ করা সম্ভব নয়। জেল থেকে মুক্ত হলে আগামী জীবনে কি করে চলবেন, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পরেন ইসমাইল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সবজি বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন কর্মকর্তাদের কাছে।
 
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, সমাজে প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন থাকে। ইসমাইলের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝড়ে গেছে। ইসমাইল হোসেন আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ইসমাইলের হাতে নতুন ঘরের চাবি, ভ্যান এবং সবজির ব্যবসা করার জন্য নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।