ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাজারীবাগে বিদেশি চিকিৎসক হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৪
হাজারীবাগে বিদেশি চিকিৎসক হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. নাইম খান (২২), মো. জাহিদুর রহমান রিফাত (২০) ও মো. আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওন (২২)।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে খুলনার ডুমুরিয়া ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকুও উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসতেন। গত ১৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে হাজারীবাগের পশ্চিম ধানমন্ডির ৮/এ রোডের ২৯৪/১ নং বাসার দ্বিতীয় তলায় তার বাসায় অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করে। প্রবেশের পর ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন দুস্কৃতকারী তার মুখ চেপে ধরে বাধা দেয়। একপর্যায়ে দুস্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় তার স্ত্রীর চিৎকারে দুস্কৃতকারীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

পরে গুরুতর আহত ডা. আব্দুর রশিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ডিসি মো. মাসুদ আলম আরো জানান, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, ঘটনার আগের বিভিন্ন সময়ে ওই বাসায় মেস হিসেবে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজার এলাকা থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজারীবাগ থানার অপর একটি টিম ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গ্রেপ্তার নাইম খান ও  জাহিদুর ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বাসার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাদের মনোমালিন্য হতো। এতে তারা ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিকের বাসায় প্রবেশ করে টাকা পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনাসহ ওই টাকা পয়সা ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর রাতে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বাসার সীমানা প্রাচীর টপকে টাকা পয়সা লুট করার জন্য বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় ডা. আব্দুর রশিদ নামাজ পড়ার জন্য উঠলে গ্রেপ্তারদের উপস্থিতি টের পান। ডা. আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে তার সঙ্গে গ্রেপ্তারদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ওই চিকিৎসক নিহত হন।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ডিসি মো. মাসুদ আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৪
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।