ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
ফরিদপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ

ফরিদপুর: ফরিদপুরে কোটা সংস্কার দাবি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে আন্দোলনকারীরা।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বেশকিছু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।  

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, জিলা স্কুলের সামনে, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রেলস্টেশন, অনাথের মোড় ও জনতার মোড় সংলগ্ন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেছে।  

ফরিদপুর পৌরসভা শহর ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুল-কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে গেলে সাঁজোয়া যানসহ পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জিলাস্কুল ও পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দিকে দৌড়ে গিয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে পরে তারা স্টেশন রোড ধরে দৌড়ে পালাতে কেউ কেউ ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পুলিশ পরে ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেকের মাথায় হেলমেট এবং হাতে লাঠি দেখা যায়।

কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পুলিশের গাড়ি পেছনের দিকে চলে আসে। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকায় জড়ো হন। এ খবর পেয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেই দিকে ছুটে যান। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল থাকলে ডিবি পুলিশের গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এরপর শহরের মুজিব সড়কে আলীপুরের মোড়, ভাঙারিপট্টি, অনাথের মোড়ে দেড়টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা দুদিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনতার মোড়ে বিক্ষোভ আন্দোলনকারীদের কোটা সংস্কারে সংহতি প্রকাশ করে মিছিল বের করেন। তাদের সঙ্গে পেছন থেকে কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা যোগ দিতে এলে পুলিশের ধাওয়ায় পালিয়ে যান তারা। পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, জিলা স্কুল সামনে, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রেলস্টেশন, অনাথের মোড় ও জনতার মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে বেশকিছু ছাত্র-ছাত্রীদের আটক করেছে। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে তিন প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন রয়েছে।  

ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে ছাত্রদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে। তারা ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে সরকার হঠানোর অ্যাজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের এ অশুভ উদ্দেশ্য আমরা সফল হতে দিতে পারি না। এ কারণে আমরা রাস্তায় অবস্থান করছি।

তবে ‘পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদের লাঠিপেটা করেছে’ এ কথা অস্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আটকের সংখ্যা জানাতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।