ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনুমতি ছাড়াই ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ দাবি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
অনুমতি ছাড়াই ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ দাবি  মানববন্ধনে ভুক্তভোগী জমিমালিকদের একাংশ

খুলনা: খুলনার কয়রায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ না করে বাঁধ নির্মাণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।  

শুক্রবার (১০ মে)  দুপুরে উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী হরিহরপুর গ্রামের বাঁধে মানববন্ধন করেন তারা।

জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। এক হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ কাজের জন্য অনুমতি ছাড়াই বাঁধের পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন তারা। এতে স্থানীয় জমি মালিকরা বাধা দেন। পরে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না জমি মালিকরা।  

মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা জানান, ঠিকাদারের লোকজন প্রথমে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছিল। তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে তাতে আগামী ১০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না।  

মানববন্ধনে উপস্থিত হরিহরপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর আগে পাউবো কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের লোকজন বলেছিলেন-নদীর চর থেকে মাটি কেটে আনা হবে। সেখানে লাল ফ্ল্যাগ টানিয়ে চার বনায়নের গাছও কেটে ফেলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বাঁধের ভেতরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করেন। দুপাশের অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষের অনেক জমি নদীতে চলে গেছে। এখন যেটুকু জমি আছে সেখান থেকে এভাবে মাটি কেটে নিলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে কৃষিজমি ও মানুষের।  

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক সবিতা রানী সরকার বলেন, বাঁধের পাশে আমার চার বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। আমার জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিয়েছে। বাধা দিলে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো সুরাহা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আজ আমরা জমির মালিকরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।

ওই গ্রামের রেনুকা রানী মণ্ডল বলেন, মাটি কাটার সময় বাড়ির গাছপালা তো কাটছেই, এরপর দেখছি বিদ্যুতের খুঁটিগুলোও সরিয়ে এনে বাড়ির মধ্যে দিয়ে পুঁতে দিচ্ছে।  

জানতে চাইলে বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোং- এর পক্ষে কাজের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পার্শ্ববর্তী নদীর চরে পর্যাপ্ত মাটি না থাকায় কাজের স্বার্থে ভিতরের জমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এতে যেসব মালিকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তারাই দেখবেন। আর আপাতত বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর প্রয়োজন নেই।  

পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিকুর রহমান বলেন, জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়টি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুম, তাই এ মুহূর্তে কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য জমি মালিকদের বুঝিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময় : ১৬১০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
এমআরএম/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।