ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে এক পূজামণ্ডপে ২০১ প্রতিমায় দুর্গাপূজা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
ফরিদপুরে এক পূজামণ্ডপে ২০১ প্রতিমায় দুর্গাপূজা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের শ্রী শ্রী হরি মন্দিরে একটি মণ্ডপে ২০১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনি অবলম্বনে ও ৫২ খণ্ডে বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম শারদীয় দুর্গোৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজা চলবে পাঁচ দিন। আগামী ২৪ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ বছর ঘটকে চরে দেবী দুর্গা মর্ত্য লোকে পদার্পণ করবেন। আবার ঘটকেই কৈলাশে ফিরবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার ফরিদপুর জেলায় মোট ৮৩৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গতবারের চেয়ে ফরিদপুরে পাঁচটি মণ্ডপে বেশি সংখ্যক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরে ৮২৯টি মণ্ডপে পূজা উদ্‌যাপন হয়।  

সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ফরিদপুরে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। দিনরাত প্রতিমা তৈরির পর শেষ মুহূর্তে সাজাতে ব্যস্ত কারিগররা। অধিকাংশ পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির মূল কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন শুধু চলছে সাজ-সজ্জায় ও রঙের কাজ। সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপগুলো। এখন শুধু প্রতিমা পরিপূর্ণ রূপ দিতে রং তুলির শেষ আঁচড় দেওয়া হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পৌর সদরের শ্রী শ্রী হরি মন্দিরে দুর্গা পূজার আয়োজন একটু ব্যতিক্রমধর্মী। পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে এখানে সত্য, দ্বাপর, ত্রেতা ও কলি এই চার কালে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে ভগবানের অংশ হিসেবে যে চারজন অবতার আবির্ভূত হয়েছেন (শ্রীহরি, শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীগৌরাঙ্গ), তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে ৫২টি খণ্ডের মাধ্যমে। একটি পূজামণ্ডপে আলাদা আলাদা কাহিনির ওপর ভিত্তি করে প্রতিমা সাজিয়ে পূজা উদ্‌যাপন করা হবে।

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সত্যযুগে শ্রীহরির নিদ্রা; ত্রেতাযুগে রামচন্দ্রের বিয়ে, বনবাস, সীতাহরণ, দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণের কংসের কারাগারে জন্ম, জন্মের পর নন্দালয়ে গমন, নৌকাবিলাস এবং কলিযুগে জগাই-মাধাইয়ের শিষ্য হওয়া, নগরকীর্তন প্রভৃতি কাহিনি নিয়ে এই ৫২ খণ্ড তৈরি করা হয়েছে। যাতে সব মিলিয়ে রয়েছে মোট ২০১টি প্রতিমা।  

ভারত থেকে আগত প্রতিমা শিল্পী অনিল পাল ছয়জন সহযোগী নিয়ে প্রতিমাগুলো তৈরিতে সময় লেগেছে প্রায় তিন মাস। গত বছরও তিনি এখানে প্রতিমা তৈরির কাজ করেছিলেন। গত বছর ১০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়। এবার গত বারের চেয়েও একশ প্রতিমা বেশি তৈরি করা হয়েছে।  

প্রতিমা শিল্পী অনিল পাল বলেন, গত বছর ১০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। তাতে অত্র অঞ্চলের মধ্যে প্রতিমাগুলো দর্শনার্থী ও ভক্তদের পছন্দ হয় এবং অত্র এলাকার মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদ্‌যাপিত হয়। এবার ছয়জন সহযোগী নিয়ে তিন মাস ধরে কাজ করছি। গতবারের চেয়ে এবার ১০০ প্রতিমা বেশি। মোট পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে এবার ২০১টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আশাকরি গত বারের চেয়েও এবার বেশি ভালো হবে।

শ্রী শ্রী হরি মন্দির কমিটির সভাপতি নিত্য গোপাল মণ্ডল বলেন, গত বছর অত্র অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বর্তমানে তরুণসমাজের একটি বড় অংশ ধর্ম বই খুব একটা পড়াশোনা করে না, অতীত জানে না। নানা ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ওই তরুণদের অতীত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই এ আয়োজন।  

তিনি আরও বলেন, তার ধারণা ও বিশ্বাস, এসব দেখে আজকের বিভ্রান্ত তরুণসমাজ সঠিক পথে ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে শ্রী শ্রী হরি মন্দির ও পূজা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, দেবী দুর্গাসহ ২০১টি প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে গতবারের চেয়েও এবার দেশের অন্যতম বড় পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি গত বছর লাখো মানুষের আগমন ঘটেছিল। এবারও এ পূজা দেখতে দেশের দূরদূরান্ত থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থীরা আসবে। আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর প্রায় লাখ দশেক টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এবার বাজেট বাড়ানো হয়েছে। এবার ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। মন্দির কমিটি ৫১ সদস্য বিশিষ্ট। সদস্যরা নিজেদের ছাড়াও বিভিন্ন মানুষের দান-অনুদানই এই টাকার উৎস। ২০ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এ পূজা ও প্রতিমার প্রদশর্নী চলবে।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, আলফাডাঙ্গা হরি মন্দিরে গত বছর থেকে জেলার মধ্যে সেরা এবং জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদ্‌যাপন হয়ে আসছে। এবারও লাখের উপরে দর্শনার্থীদের ভিড় এবং আগমন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। পূজা শুরুর আগেই প্রতিদিন সকাল বিকেলে দলে দলে লোকজন দেখতে আসেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ড.যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ফরিদপুরে আসন্ন দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আশাকরি সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো.শাহজাহান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা শেষ করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মন্দিরগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসারসহ মোবাইল টিম কাজ করবে। আমাদের পুলিশ-আনসার বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহ্সান তালুকদার বলেন, আমরা চাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এই দুর্গাপূজা উৎসবটি নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক। এর জন্য যা যা প্রয়োজন জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এবারের দুর্গাপূজায় প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। প্রত্যেকটি পূজা মণ্ডপের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও পূজা চলাকালীন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।