ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পিআইওর বিরুদ্ধে, মামলার নির্দেশ আদালতের 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৩
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পিআইওর বিরুদ্ধে, মামলার নির্দেশ আদালতের 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৬২ লাখ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে তার নামে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রগঞ্জ আদালতে অভিযোগ করেছেন।

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক তারেক আজিজ এ নির্দেশনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পেশকার নুরুল আমিন।  

মামলার বাদী মামুনুর রশিদ সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের করইতোলা গ্রামের বাসিন্দা।  

বাদী তার আরজিতে উল্লেখ করেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রতি বছর জেলার সংসদ সদস্যদের অনুকূলে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য গম, চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের অনুকূলে খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্যশস্য উত্তোলন করে প্রকল্পের কাজের শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করার এবং কাজ সম্পন্ন করার কথা। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্যের অনুকূলে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পের কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ১০ টন গম ইস্যু করা হয়। ওই গমের বিপরীতে জেলার সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের পশ্চিম মান্দারী কুরুজি বাড়ির রাস্তা সংস্কার ও মেরামত প্রকল্প দেওয়া হয়। এছাড়া একই মন্ত্রণালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রথম পর্যায়ে নন ওয়েজ খাতে প্রাপ্ত ২১ লাখ ৩১ হাজার ২৬২ টাকা ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ২১ লাখ ৩১ হাজার ২৬২ টাকা জনস্বার্থে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেন পিআইও।  

বাদী আরও উল্লেখ করেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বিভিন্ন সময়ে নিজের খেয়াল খুশিমতো ফরম সাজিয়ে আরও চারটি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত গমের বিপরীতে কাজ না করিয়ে এবং শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন না করে কালোবাজারে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন।  

তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ তখনকার লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে অসদাচরণ, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।  

এছাড়া ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় তাকে লক্ষ্মীপুর থেকে বদলি করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল।  

পিআইওর অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদগুলোও আদালতের নজরে আনেন বাদীর আইনজীবী।  

মামলার বাদী মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন সরকারি বরাদ্দের অনুকূলে খাদ্যশস্য ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে জনস্বার্থে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।  

বাদীর আইনজীবী মাহবুবুল করিম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, পিআইও দুর্নীতি করে প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন। আমরা এ বিষয়টি আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালত আমাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানাকে অভিযোগটি এফআইআর ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।  

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মামলার বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে আসেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।