ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৯৯৯-এ কল করেও ঠেকানো গেল না গরু লুট, মিলল যুবকের মরদেহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
৯৯৯-এ কল করেও ঠেকানো গেল না গরু লুট, মিলল যুবকের মরদেহ

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের গরু লুট ঠেকাতে কল করা হয় জরুরী সেবার ৯৯৯ নম্বরে। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব এক কিলোমিটার হলেও পুলিশ পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা।

এর মধ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে ৭টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। ঘটনাস্থলের পাশেই মিলেছে এক যুবকের মরদেহ।

গরুর মালিকসহ গ্রামবাসীর দাবি, ডাকাতরা পিটিয়ে হত্যা করেছে মীর কাশেম (৩২) নামে ওই যুবককে। তবে পুলিশ বলছে, গরু লুট আর মৃতদেহ উদ্ধার ভিন্ন ঘটনা।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার এক সবজি ক্ষেতে মীর কাশেমের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

এর আগে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত গভীর রাতে ঘটে ওই ডাকাতির ঘটনা।

অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়াল ঘরে থাকা ৭টি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে রাতে উঠে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছোটাছুটি শুরু করেন। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান, গরুগুলোকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে ডাকাত দল। এসময় তারা গরুগুলো ডাকাতদের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ডাকাতরা এসময় জামাতা ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান তিনি। ঘটনার পর থেকে তার ভাতিজা মীর কাশেম নিখোঁজ ছিলেন। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মরদেহ পাশের সবজি
ক্ষেতে দেখতে পান।  

রাতে ডাকাতি ও গরু লুটের সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যায় বলেই দাবি করেন মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, মীর কাশেমকে দু-হাত পেছনে, মুখ, চোখ এবং পা জোড়া করে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

এদিকে, গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার অভিযোগ করে বলেন, ডাকাতিকালে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা ৯৯৯ নম্বরে কল করায় বাড়ির সদস্যদের বকাঝকা করেন।

তাদের অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা আমাদের বলেন, চুরি হলে আমরা কি করবো, ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুলছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তুমি ক্লাস নাইনে পড়ো, নাইন বানান জানো? 

তবে অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু লুটের সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। তাছাড়া ঘটনা গভীর রাতে ঘটায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিলো। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেঁধে ফেলার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজনকে ধরে ফেললে অপর ৪ ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তবে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় সাইজের দুটি গরু নিয়ে ডাকাতদল গাড়িযোগে সটকে পড়ে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরির্দশক) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

আর ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোনের করার সত্যতা স্বীকার করে ওসি জানান, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পাওয়ার আগেই পুলিশ গরু লুট ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করে। আর কাউকে বকাঝকা করার বিষয়টি সত্য হতে পারে না। কেননা পুলিশ সদস্যের
পোশাকে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল।

বাংলাদেস সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এসবি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।