ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাতৃভাষার বই পেয়ে বেজায় খুশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
মাতৃভাষার বই পেয়ে বেজায় খুশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: পার্বত্য এ জেলায় পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বহু জাতির মানুষের বসবাস। সরকার তাদের কথা মাথায় রেখে শিশুদের তাদের মাতৃভাষা শিখার লক্ষ্যে চলমান পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার বই প্রদান করেছে।

তাই সারাদেশে বই উৎসব উদযাপিত হলেও পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে বই উৎসবের আনন্দটা একটু বেশিই হয়।

দীর্ঘদিনের দাবির ভিত্তিতে সরকার এসব ভিন্ন ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করায় শিক্ষার্থীরা যেমন খুশি, তেমনি তাদের পরিবারও খুশি।

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে জেলার দশ উপজেলার চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে ১৫ হাজার ৮২০টি, প্রথম শ্রেণীতে ২২ হাজার ৪১৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২২ হাজার ৬৩৫টি ও তৃতীয় শ্রেণীতে ছয় হাজার ৮৭৯টি বইসহ সর্বমোট ৬৬ হাজার ২৫০টি বই বিতরণ করা হয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চাকমা ভাষার বই দেওয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ২২৪টি, মারমা ভাষার বই দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮২১ এবং ত্রিপুরা ভাষার বই দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১০১টি।

সূত্রটি আরও জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ শিক্ষায় জেলার দশ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭০৭টি। তবে এনজিও, কিন্ডারগার্ডেন, রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়সহ মোট প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ৬৪টিতে দাঁড়িয়েছে।

বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী অলকা নন্দা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার মাতৃভাষার বই পেয়ে অনেক আনন্দ লাগছে।

একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নোরা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি নতুন বই পেয়েছি। সঙ্গে আমার মা যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষার বই হাতে পেয়ে ভাল লাগছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মো. সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জেলার বেশিরভাগ বিদ্যালয়গুলোতে বই পৌঁছে গেছে। তবে যেসব দুর্গম এলাকা রয়েছে, সেখানে বই পাঠাতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়েছে। চিন্তার কোন কারণ নেই; আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বই সঠিক সময়ে সেসব বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে যাবে।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে আমরা ভীষণ খুশি। এটা সরকারের বড় সফলতা।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের তাদের স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদান শেখাতে জেলা পরিষদ শুরু থেকে উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষকদের আগে মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। এরমধ্যে দেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো এবং সার্দি এ পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ শুরু হলেও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বই পাচ্ছে।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণী, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণীতেও মাতৃভাষায় বই পেয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কেবল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা।

তবে পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বসবাস করলেও তাদের সন্তানেরা নিজ নিজ মাতৃভাষায় বই পড়তে পারছেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।