ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যে প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগ চান সুপ্রিম কোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
যে প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগ চান সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে দরখাস্ত আহ্বান ও একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এ জন্য একটি প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়া করে ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আর উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে এ স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের দ্বারপ্রান্তে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

বর্তমানে সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দেবেন। (২) কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে, এবং (ক) সুপ্রিম কোর্টে অন্যূন দশ বছর আইনজীবী না হলে; অথবা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে; অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে ;তিনি বিচারকপদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

৯৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বাড়ানো উচিৎ বলে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে তিনি যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করতে পারবেন, কিংবা তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারককে [যে কোন অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগের আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবেন]: তবে শর্ত থাকে যে, অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে এই সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীন বিচারকরূপে নিযুক্ত হতে কিংবা বর্তমান অনুচ্ছেদের অধীন আরও এক মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত হতে বর্তমান অনুচ্ছেদের কোনো কিছু নিবৃত্ত করবে না।

কিন্তু এমন পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন।

গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর তিনি বিচার বিভাগের সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তার মধ্যে এটি অন্যতম। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলমান।

প্রস্তাবনায় প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। ওই খসড়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মতামতও নেওয়া হয়। বিচারপতিরা উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত মোট ১৫টি মতামত দেন। ওই মতামত দেওয়ার পর সুপারিশটি গত ২৮ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার জন্য একটি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান।

প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ওই কাউন্সিলের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১০ জন। প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন।

সদস্য হিসেবে যাদের প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, অধস্তন আদালতের বিচারক হতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এরূপ বিচারকদের মধ্য হতে কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি-জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আইনের অধ্যাপক এবং দুইজন নাগরিক প্রতিনিধি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে উপযুক্ত প্রার্থীকে সুপারিশ প্রদানসহ কাউন্সিলের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারক নিয়োগে সুপারিশ করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধ জানানো হলে কাউন্সিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এছাড়া, কাউন্সিল প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে কাউন্সিলের সভায় আহবান করতে পারবে বা যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিল কর্তৃক চাহিদাকৃত তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ... ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।