ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আদালতে হট্টগোল: দুর্ভাগ্যজনক বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
আদালতে হট্টগোল: দুর্ভাগ্যজনক বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর আদেশের সময় আদালত কক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীর কজলিস্ট ছুড়ে মারার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ইউটিউব, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর আদেশের সময় আদালত কক্ষে হট্টগোল করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

সোমবার (২৮ আগস্ট) এ ঘটনার সময় বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম এজলাস ছাড়েন।

এর আগে বক্তব্য সরাতে সম্পূরক আবেদন করেন রিটকারী। পরে ওই আবেদন অ্যালাউ করেন হাইকোর্ট। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে উদ্দেশে করে বলেন, আপনার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি আবেদন (রিট মামলাটি অন্য আদালতে নিতে) দিয়েছি। এ অবস্থায় আপনি এ বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন না।

এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা হট্টগোল করতে থাকেন এবং আদালতের উদ্দেশে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা তারেকের পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে আদালতের দুই বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান।  

এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত অনুমতি না দিলে আপনি আদালতে কথা বলতে পারবেন না। বিচারাধীন কোনো মামলার একটি পক্ষে ওকালতনামা জমা দিলে কথা বলতে পারবেন। আমার জানা মতে তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) কোনো ওকালতনামা জমা দেননি। ওকালতনামা জমা না দিলে কথা বলার অধিকার থাকে না। আদালত যদি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন তাহলে কথা বলতে পারবেন।

ওনাদের বক্তব্য রাখারই অধিকার নেই। অথচ ওনারা কথা বলছেন। একজন জুনিয়র আইনজীবী নাকি কজলিস্ট ছুড়ে মেরেছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ওই আইনজীবী যেটা করেছেন এটা আদালতের প্রতি অসম্মান বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।  

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ রাজা ও সানজিদা খানম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এ জে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল ও রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।

সোমবার আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, নয়াপল্টনের জনসভায় তারেক রহমানের বক্তব্য মাইকে প্রচার করা হয়। ইদানিং খুব বেশি রকমভাবে প্রচারিত হচ্ছে আদালতের আদেশ ভায়েলেট করে। যার জন্য আমরা বিটিআরসির প্রতি একটা নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত আবেদনটি অ্যালাউ করেছেন। বিটিআরসির প্রতি নির্দেশনা দিতে যেন ইউটিউব, সামাজিক সব মাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য, বিবৃতি, ভিডিও-অডিও প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা অযাচিতভাবে কোর্টের কার্যকালাপকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা কোনোভাবে পার্টি না (মামলায় পক্ষভুক্ত না)। তারা আজ ন্যাক্কারজনক কাজ করছে।

গত ১৩ আগস্ট তারেক রহমানের সংশোধিত ঠিকানায় নোটিশ পাঠাতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। ওই নোটিশ জারির পর অনলাইন থেকে তারেক রহমানের বক্তব্য সরাতে আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। এরপর সোমবার আদেশ দেন হাইকোর্ট।  

জানা যায়, রুল শুনানির জন্য সেকশন থেকে যে নোটিশ পাঠানো হয় সেখানে তারেক রহমানের ঠিকানা ভুল লেখা হয়েছে। রোড নম্বরের জায়গায় রুম নম্বর হয়েছে। এরপর সংশোধিত ঠিকানা জমা দেন রিটকারীরা।

এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। রিটে কোনো পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুনঃউৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্যসচিবের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছিলেন।

রিটে বলা হয়, তারেক একজন ফেরারি আসামি। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে ও বেআইনিভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন ফেরারি আসামির বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার হতে পারে না। যাকে আদালত খুঁজে পাচ্ছেন না, তার বক্তব্য প্রচারযোগ্য নয়।

পরদিন রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তারেকের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল জারি করেন।

রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে সেই দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম (বর্তমানে মন্ত্রী), অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর (বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল), অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম (তৎকালীন এমপি)। সম্প্রতি এ রুল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয় রিটকারী পক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।