ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কবর জিয়ারতের দোয়া

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
কবর জিয়ারতের দোয়া

মৃত্যু আল্লাহর এক অঘোম বিধান। মৃত্যুকে অস্বীকার করা কিংবা মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো পথ নেই।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৫৭)

মৃত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য জীবিতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো গত হওয়া আপনজনের কবর জিয়ারত করা। এ জন্য কবর জিয়ারতের গুরুত্ব, উপকারিতা ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা সবার জন্য জরুরি।

কবর জিয়ারতে আখিরাতের স্মরণ

দৈনিক মৃত্যুকে স্মরণ করার কারণে মানুষের গুনাহ কমে যায়। আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।

হাদিসে মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনাশকারী মৃত্যুকে স্মরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৭)
কবর জিয়ারতে হৃদয় বিগলিত হয়। চোখের কোণে জমে বিগলিত হৃদয়ের তপ্তজল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

কবর জিয়ারতের উপকারিতা

কবর জিয়ারতের অনেক উপকারিতা আছে। জিয়ারতকারী সওয়াব লাভ করে।

এর মাধ্যমে জীবিত আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ব্যক্তিজীবনে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের তাড়া অনুভব সদাজাগ্রত থাকে। কবরবাসীদের হক আদায় করা যায়। এগুলো কবর জিয়ারত করার অন্যতম উপকারিতা।  

আবু উসাইদ মালিক ইবনে রাবিয়া সায়িদি (রা.) বলেন, ‘একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহর রাসুল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কোনো সুযোগ আছে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ? তুমি তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করবে। তাদের অসিয়ত পূরণ করবে। তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখবে এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৫২)

কবর জিয়ারতের দোয়া

কবর জিয়ারতের উদ্দেশে গিয়ে প্রথমে কবরবাসীদের উদ্দেশে সালাম দিতে হয়। সালাম দেওয়া সংক্রান্ত তিনটি হাদিস আছে। সহজ ও ছোট্ট দোয়া দুটি এই—

১. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়াটি পাঠ করেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

২. আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম দ্বারা কাওমিম মুয়মিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৪৯)

কবর জিয়ারতের পদ্ধতি

হাদিসে কবর জিয়ারতের নির্ধারিত বিশেষ কোনো পদ্ধতির কথা নেই। নির্ধারিত কোনো সুরা বা দরুদ পাঠের কথাও আসেনি। তবে এ ক্ষেত্রে সুরা মুলক তিলাওয়াত করা উত্তম। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক সাহাবি একটি কবরের ওপর তার তাঁবু স্থাপন করেন। তিনি ধারণা করতে পারেননি যে এটি একটি কবর। হঠাৎ তিনি অনুভব করেন যে কবরে একজন লোক সুরা মুলক তিলাওয়াত করছেন। অবশেষে তিনি তা পাঠ শেষ করেন। তিনি পরে নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এক স্থানে আমার তাঁবু ফেলি। আমার ধারণা ছিল না যে এটি একটি কবর। হঠাৎ অনুভব করি, একজন লোক সুরা মুলক তিলাওয়াত করে খতম করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এটি হলো প্রতিরোধক। এটি হলো মুক্তিদায়ক। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। এটি কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়। ’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০)

এ ছাড়া সুরা ইয়াসিন, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস এবং কয়েকবার দরুদ পাঠ শেষে ইসালে সওয়াব করা উত্তম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।