ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

‘দিল্লি পৌঁছেছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছেন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৪
‘দিল্লি পৌঁছেছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছেন’ সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার

কলকাতা: ভারতে এসে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। মোবাইল ফোন নম্বর বা অন্য কোনো মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

জানা যায়, গত ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানার গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপালের সঙ্গে তার প্রায় পঁচিশ বছরের সম্পর্ক।

গোপাল বরানগর থানায় জানিয়েছেন, পরদিন অর্থাৎ ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন এমপি। চিকিৎসকের কাছে যাবেন বলে নিজেই গাড়ি ঠিক করেন। গোপালের পরিবারের গাড়ি তিনি ব্যবহার করেননি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে হদিস মিলছে না আনারের।

পুলিশকে গোপাল বিশ্বাস আরও জানিয়েছেন, তার কাছে একটি মেসেজ এসেছিল যে, তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু ওদিকে আনারের পরিবার গোপালকে জানিয়েছে, এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব না দিলেও শেষ পর্যন্ত সাধারণ ডায়েরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ডায়েরিতে গোপাল বিশ্বাস বলেছেন, গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার সময় আমার বাড়িতে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে আসেন। পরের দিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে আমার বাড়ি থেকে রওনা হয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘আমি দুপুরে খাব না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো’। তারপর উনি সন্ধ্যাবেলা না ফিরে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে চলে যাচ্ছি। ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই’। এরপর ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি দিল্লিতে পৌঁছেছি। আমার সাথে ভিআইপিরা আছেন। ফোন করার দরকার নেই’। এই একই মেসেজ নিজের বাড়িতে এবং নিজের পিএকে ফরওয়ার্ড করেছিলেনে এমপি।

থানার ওই ডায়েরিতে গোপাল আরও বলেন, গত ১৬ মে সকালবেলা এমপির পিএ ফোনকল করলেও তা রিসিভ করেননি তিনি। পরে কলব্যাকও করেননি। এরপর ১৭ মে এমপির মেয়ে আমাকে ফোন করে বলেন, ‘আমার বাবার সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না’। এরপরই আমি ওনার যাবতীয় পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সবাই তারপর থেকে ওনাকে ফোনকল করেও সাড়া পাচ্ছেন না। সে কারণেই আমি বরানগর থানায় মিসিং ডায়েরি করছি। ’  

এ বিষয়ে ব্যারাকপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনুপম সিং বলেন, সাধারণত মিসিং ডায়েরিতে প্রাথমিকভাবে যেভাবে তদন্ত শুরু হয়, সেভাবেই শুরু হয়েছে। যেহেতু তিনি ফরেনার (বিদেশি) এবং একজন এমপি, সে কারণে আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসকে জানিয়েছি। তবে এর চেয়ে বিশেষ কিছু বলা যাবে না।

এদিকে রোববার (১৯ মে) সাংবাদিকরা গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি খুঁজে পেলেও পরিবারের তরফ থেকে কেউ গেট খোলেননি। উপরন্তু বন্ধ দরজা থেকে তারা বলে দিয়েছেন, গোপাল বিশ্বাস এখানে থাকেন না। পরে অবশ্য জানিয়েছেন, গোপালও ডাক্তার দেখাতে গেছেন। কখন আসবেন তারা জানেন না। এমপির বিষয় জানতে চাওয়া হলে ওই পরিবারের তরফে বলা হয়, ‘এখানে কেউ এই নামে থাকেন না’।

অন্যদিকে ঢাকায় এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন তার বাবার খোঁজ পেতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দ্বারস্থ হয়েছেন। রোববার (১৯ মে) বিকেলের দিকে তিনি মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে যান।

ডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাবার নিখোঁজের বিষয়ে অবহিত করতে ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৪
ভিএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।