ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

বিদায় ব্রাজিল বিদায় বিশ্বকাপ ।। ফরহাদ টিটো ।।

ওয়ার্ল্ড কাপ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪
বিদায় ব্রাজিল বিদায় বিশ্বকাপ ।। ফরহাদ টিটো ।।

পুরো আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ছিলো  লিওনেল মেসি’র হাতে উঠবে এবারের বিশ্বকাপ। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর ধরে বেড়ে ওঠা প্রশ্নটারও জবাব মিলবে: মেসি কি মারাদোনার সমকক্ষ নাকি তার চেয়েও বড়? আপাতত উত্তরটা মিলেও গেছে।

মারাদোনার কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পারলেন না মেসি। জেতা হলো না বিশ্বকাপ, সুতরাং এই বিশ্বে এই প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় হয়েও সবটুকু পাওয়া হলো না তার। নিজের দেশের মানুষের কাছে মারাদোনার মতো তিনি ‘ঈশ্বর’ নন । ফুটবলের ‘ঈশ্বর’ হয়ে উঠতে যে তাকে অপেক্ষা করতে হবে আরও চার বছর।

এভাবে কাউকে মাপা অবিচারও। কী না করেছেন মেসি তার এ যাবত খেলার জীবনে। স্প্যানিশ লিগে ইতিমধ্যে অমর হয়ে যাওয়া মেসি পুরো বিশ্বটাকেই তো এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত যেখানেই যাবেন, মেসির ভক্ত পাবেন। যারা স্বপ্ন দেখে মেসিকে নিয়ে, মেসি ভালো খেললে দিনটাই শুভ হয়ে যায় তাদের, খারাপ খেললে ভেঙে যায় মন। মারাদোনা খেলা ছেড়েছেন বিশ বছর আগে। কিন্তু আজকের আর্জেন্টিনার বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তা তো মূলত মেসির জন্যই।

যোগ্য দল হিশেবেই বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে জার্মানি। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করা জার্মানিই যে ফাইনালে জিততে যাচ্ছে- এমন বিশ্বাস প্রায় সবাই করতে শুরু করেছিলেন। মোট কথা, ফাইনালের আগে কোনো বিবেচনাতেই আর্জেন্টিনা এগিয়ে ছিলো না জার্মানির চাইতে। তবু ফুটবলবিশ্ব তাকিয়ে ছিলো একটা ‘যদি’র দিকে। এই যদির নাম লিওনেল্ মেসি! অংকটা এমন ছিলো, যদি মেসি খেলে ফেলতে পারেন আসল মেসির মতো, যদি মেসি জ্বলে উঠতে পারেন প্রথম দুই খেলার মেসির মতো!

যদিও এই ‘যদি’টা যদি-ই থেকে গেছে শেষ পর্যন্ত। গোল করাতে পারেননি মেসি, পারেননি করতেও। তবুও বিশ্বের অনেক মানুষকে অবাক করে দিয়ে এই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, মুলার বা রোবেন কি জিততে পারতেন না গোল্ডেন বল? মেসি বর্তমান পৃথিবীর সেরা ফুটবলার সন্দেহ নেই। তবে এই বিশ্বকাপের সেরা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

পুরস্কার নেওয়ার জন্য মেসি যখন মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ভীষণ বিমর্ষ লাগছিলো তাকে। চেহারা ভর্তি বিষন্নতা নিয়ে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়েও আসছিলেন তিনি। চোখে পানি নেই, অথচ ভেতরটা কাঁদছে তার - এটা পড়া যাচ্ছিলো পরিষ্কার ।

আর ভেতরে ভেতরে না, চোখের কান্নাতেই ভেসে গেছিলো পু্রো ব্রাজিল। জার্মানি আর হল্যান্ডের কাছে অপদস্থ হয়ে। যে দেশে ধর্ম আর জীবনের নাম ফুটবল তারা এই অপমান সইবে কী করে! ব্রাজিলের এই কান্নায় সঙ্গী হয়েছিলো না জানি বিশ্বের কত কোটি মানুষ। এমন দৃশ্য কেউ কি দেখতে চেয়েছিলো কোনোদিন?
শিশুর মতো কেঁদেছেন নেইমারও। এই বিশ্বকাপের আরেক তারকা। শিরদাঁড়ায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার দিন অনেক মানুষকেই কাঁদিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার।

কান্নায় ভাসা এই বিশ্বকাপকে মনে রাখতে হবে আরো কিছু কারণে। সুয়ারেজের কামড়, রেফারি’র পকেট থেকে হুটহাট বেরিয়ে আসা ভ্যানিশিং স্প্রে, মাঠ-গ্যালারিতে গলা খুলে গাওয়া ব্রাজিলের মর্মস্পর্শী জাতীয় সংগীত, হৃদয়-ছোঁয়া উদ্বোধনী, গ্যালারিতে অগুনতি সুন্দর মুখ আর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড ‘দ্য বেস্ট হোস্ট এভার’।
আমার তো তাই মনে হয়। যে কয়টা বিশ্বকাপ দেখেছি জীবনে ব্রাজিলই সেরা! ‘দ্য বেস্ট হোস্ট এভার’- আপনি কি বলেন?

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।