এক সময়ের বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বলা হতো সিনেমাকে। আর সিনেমা প্রদর্শনের প্রধান মাধ্যম সিনেমা হল।
এসব এখন শুধুই অতীত, রূপকথার গল্পের মতো। বর্তমানে সিনেমার করুণ দশা। ভালো সিনেমার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। মূলত শূন্য দশকের প্রথম দিক থেকেই সিনেমা ব্যবসায় ধস নামে। এরপর থেকেই একের পর এক বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হল।
এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে ৫৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা হল! ১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর হলটি উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান। এরপর থেকে স্বগৌরবে চলছে সিনেমা হলটি। কিন্তু পর্যাপ্ত সিনেমা না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ঢাকার এই পুরাতন হলের মালিক কর্তৃপক্ষের। আর তাই প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা! এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে মধুমিতার কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এর মালিক আমরাই জানি না কবে কখন কে বন্ধ করছে। অথচ নতুন পর্দা, সাউন্ড সিস্টেম করা হয়েছে তাহলে সেগুলো কেন করেছি?
হল বন্ধের প্রশ্নে নওশাদ বলেন, এটা সত্যি আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। শুধু আমাদের কেন সারা বাংলাদেশে সকল হল মালিকদের কষ্ট হচ্ছে। পকেটের টাকা খরচ করে হল টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে তাই অনেক সময় মাথা গরম হয়ে যায় তাই হয়তো বলে ফেলি হল রাখব না। তার মানে এই না সত্যি সেটা করছি। তবে আর পারা যাচ্ছে না।
নওশাদ বলেন, বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কথাই বলছেন। কার্যত তারা খুব বেশি কিছু করেছেন বলে দেখছি না। এখনো কোনো প্রযোজক সিনেমার ঘোষণা দেয়নি, পরিচালকরা বেকার, শিল্পীরা ফিতা কাটায় ব্যস্ত এসব দিয়েতো আর সিনেমা অঙ্গন টিকে না। প্রয়োজন বাণিজ্যিক ঘরানার প্রচুর সিনেমা। ডান-বাম না ভেবে প্রযোজকদের টাকা লগ্নি করার মতো আস্বস্ত করতে হবে। আমার ধারণা অনেকেই আছেন লগ্নি করতে প্রস্তুত কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের আস্বস্ত করতে পারছেন না। এটা যত সময় লাগবে তত বেশি আমরা পিছিয়ে পড়বো। এক সময় হল বন্ধ করতে না চাইলেও অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। খবর নিয়ে দেখেন অটোমেটিক অন্তত ৩০টি হল বন্ধ হয়ে গেছে যেগুলো ঈদ ছাড়া খুলবে না। তারা ঈদ দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে ভারতীয় সিনেমা আমদানি বন্ধ। দেশের বাজারেও উন্নতমানের ভালো সিনেমার অভাব। সরকারের বাণিজ্যিক ঘরানায় অনুদানের আগ্রহ খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এসব চললে চলচ্চিত্রের উন্নয় সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকার মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। এর মধ্যে বড় সিনেমা হলগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি চালু আছে। ২০১৯ সালে ‘ফিল্মপাড়া’খ্যাত কাকরাইলের রাজমণি সিনেমা হলটির বাতি নিভে গেছে। বর্তমানে সেখানে ২২তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর হাজার আসনের সিনেমা হল ‘অভিসার’ও বন্ধ হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যেই আরও বন্ধ হয়েছে গুলিস্তান, বিউটি, রূপমহল, নাজ, শাবিস্তান, মল্লিকা, পূরবী, স্টার, সুরমা, লায়ন, যমুনা, আগমন, ডায়না, জোনাকি, চিত্রামহল, অতিথি, মানসী, পূর্ণিমা, রাজমণি, পদ্মা, মুন।
এদিকে, বন্ধ হওয়ার পথে ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর পুরোনো ও স্বনামধন্য সিনেমা হল আজাদ। ঐতিহ্যের কঙ্কাল হয়ে এখনো সচল, তবে জীবনপ্রদীপ নিবুনিবু। ঢাকার প্রথম দিককার ১০টি সিনেমা হলের অন্যতম এটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
এনএটি