ঢাকা, বুধবার, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঐকমত্যের ভিত্তিতে এনবিআর সংস্কারের তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
ঐকমত্যের ভিত্তিতে এনবিআর সংস্কারের তাগিদ এনবিআর সংস্কার নিয়ে আইসিবি-ইআরএফ গোলটেবিল আলোচনা

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার ঐকমত্যের ভিত্তিতে করার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও এনবিআর-এর সাবেক কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, যে রাজনৈতিক দল দেশ চালাবে সেই রাজনৈতিক দল, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে এনবিআর সংস্কার করা হলে সেই সংস্কার স্থায়ী ও কার্যকর হবে।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার না করা হলে এক বছর পর আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এনবিআর সংস্কার:  আইসিবি-ইআরএফ গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, সকল অংশীজনের মতামত ও এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাব করা হবে। এ জন্য রাজস্ব নীতি সংস্কার ও রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার, ডিজিটাইজেশন, ট্যাক্স  আইন, ভ্যাট আইন, কাস্টম আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এনবিআরকে স্বাধীন করতে হবে। এ জন্য ১৯৭২ সালের আইনকে অনুসরণ করার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া এনবিআরে নলেজেবল (জ্ঞানী) লোক নিয়োগ দিতে হবে। যাতে এনবিআর জ্ঞানের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারে। এজন্য যে নিয়োগ হবে, সে কে এবং তার যোগ্যতা কী, প্রস্তাবে তা যেন বিস্তারিত উল্লেখ থাকে।

এনবিআর সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্যে জোর দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান ড. মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার হলে সেটা এক বছর চলবে। তারপর আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে।

এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি ও এনবিআর-এর সাবেক সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, এসএমই-তে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হয়। এটা ইফেক্টিভ ভ্যাট। রাজস্ব ব্যবস্থার কাঠামোর কারণে এসএমই খাতকে এই বাড়তি  কর দিতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসএমই সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন এনবিআর সংস্কারে প্রস্তাব দেয়নি।

তিনি বলেন, খালি চোখে ভ্যাট ১৫ শতাংশ হলেও প্রকৃত পক্ষে ভ্যাট ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে পণ্যের ঘোষণা দেওয়া দামের পরিবর্তে আগে রেকর্ডকৃত দামের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এটা প্রকৃত ট্যাক্সের চেয়ে বেশি। এমনকি মিনিমাম ট্যাক্স বলে যে ট্যাক্স আদায় করা হয়, সেটিও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

অটোমেশন ব্যবস্থার সমালোচনা করেন ফরিদ হোসেন। এনবিআরের ডিজিটাইজেশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৯০ এর দশকে ডিজিটাইজেশন শুরু হয়েছে। অ্যাসাইকুডা, সিঙ্গেল উইন্ডো এবং এএফডি হয়েছে। এগুলো সমন্বিত নয়। যে কারণে ডিজিটাইজেন হলেও আয়কর, শুল্ক ও কাস্টমকে সমন্বিত  অনলাইন ব্যবস্থার মধ্যে আনা যাচ্ছে না।

রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে বলেন, যারা কর দেয়, তার ওপরই করের বোঝা চাপানো হয়। আর যারা কর দেয় না তারা মাফ পেয়ে যায়। এটা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কৌশল মনে করেন এনবিআর সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি ও এনবিআর-এর আরেক সাবেক সদস্য আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধিতে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতি ও অর্থ পাচার রোধ করতে হবে।

সিপিডির সিনিয়র গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ইএএফডি শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর করা যায়নি। এটা কার ব্যর্থতার কারণে করা গেল না খুঁজে বের করতে হবে।

ঘন ঘন ট্যাক্স নীতি পরিবর্তনে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয় বলে মন্তব্য করেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি)  প্রেসিডেন্ট মারিয়া হাওলাদার। তিনি মিনিমাম ট্যাক্সকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসাবে উল্লেখ করেন।

মারিয়া বলেন, লোকশান হলেও ন্যূনতম ট্যাক্স দিতে হবে, এটা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সহায়ক রাজস্ব নীতি হতে পারে না। সংস্কারের পর যে বদলে যাওয়া এনবিআর হবে, সেখানে এই ধরনের নীতি না রাখার প্রস্তাব করছি।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, ট্যাক্স নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে। এটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর।

রাজস্ব আইনের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পরামর্শ দেন ইআরএফ সভাপতি।

অতীতে এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। এবার সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, এবারের সংস্কার আলোর মুখ দেখবে বলে মন্তব্য করেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান।

ট্যাক্স প্রক্রিয়ার মধ্যে ভীতি দূর করার পরামশ্য দেন এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক হাফিজুর রহমান।

বিগত সরকারের সময়ে অর্থনীতিকে বড় করে দেখানো হয়েছে বলে শ্বেতপত্র কমিটি উল্লেখ করেছে। রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, সে হারে অর্জিত হয়নি, হয়েছে ৭ শতাংশ। এ বিষয়ে এনবিআর কী করছে প্রশ্ন তোলেন দৈনিক সমকালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর জাকির হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।