ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ শিল্প কারখানা বড় বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেছেন, গ্যাস বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ আয়োজিত ‘বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অথিতির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য গ্যাস বিদ্যুৎ অত্যাবশ্যক। মালয়েশিয়ায় শিল্পে ৭০ শতাংশ নিশ্চিত করা হয়। এই ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন আরও বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাক কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করতে সময়ক্ষেপণ হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে গ্যাস, বিদ্যু, ট্রেড লাইসেন্সের মতো সেবা দিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করে কাজ করে দেবে। এ কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ছয় মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হবে।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো দুই-একটি খাত বাদে অত্যাবশ্যকীয় সব পরিষেবা সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আনার মত দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
গ্যাসের ৭০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে কারখানা চালিয়ে নেওয়ার চিন্তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন এফসিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কারখানা চালু রাখার চিন্তা কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সামিল হবে। যারা বলছেন ৭০ ভাগ দাম বাড়ালে সমস্যা হবে না, কারখানা চালানো সম্ভব, তাদের কারখানা ছেড়ে দিচ্ছি, চালিয়ে নিক।
এ কে আজাদ আরও বলেন, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে মুলধনী যন্ত্র কমেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রপ্তানির আদেশ নেওয়ার পর কারখানা বন্ধ থাকার কারণে সময়মতো রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এর সাথে গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশের শিল্পকারখানা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সহজেই বোঝা যাবে।
লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনার ঘাটতি নেই। আর সেটা হলো আমাদের তরুণ কর্মক্ষম জনশক্তি। এই জনশক্তিকে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে রোড শো করা হয়েছে। কিন্তু দেশের চলমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই। অথচ এই বিনিয়োগকারীরাই বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশের পক্ষে কাজ করবেন। নীতি ঠিক নেই, আইনশৃঙ্খলা ঠিক নেই, ট্রেড লাইসেন্সের মতো কাজগুলো করা সময়সাপেক্ষ। বিদেশে রোড শোয়ের পরিবর্তে বর্তমান বিনিয়োগকারীদের এসব অসুবিধা দূর করতে হবে।
ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আবুল কাশেম খান বলেন, করের ট্যাক্স রেট ফিক্সড না। বিভিন্ন ট্রেডে ট্যাক্স থাকার কারণে কারোই বলা সম্ভব নয় কত ট্যাক্স দিতে হবে। আবার কোন কর কখন কমে বা বাড়ে এটাও বলা কঠিন। এ অবস্থায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব নয়।
এফবিসিআই-এর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে দস্যুরা নিয়ে যায়। দোকান দিলে চাঁদাবাজরা নিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে ট্যাক্স হ্যাভেন না হলেও একটু সুবিধা দিতে হবে। যাতে ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু পুঁজি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।
ইআরএফ-এর সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিডার হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট মাহিয়ান রহমান রচি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ