ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ প্রস্তাবে ধস 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ প্রস্তাবে ধস 

ঢাকা: গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুনে) বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকে বড় ধরনের ধস নেমেছে বিনিয়োগ প্রস্তাবে।

এই সময়ে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এ হিসাবে বিনিয়োগ প্রস্তাব ৫৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা কমেছে। শতকরা হিসাবে বিনিয়োগ প্রস্তাব কমার এই হার প্রায় ৭২ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জুলাই-আগস্টে দেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ প্রস্তাবে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারের নীতির পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চয়তা না থাকলে কোনো উদ্যোক্তা নিয়োগে আগ্রহী হন না। জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগ প্রস্তাবেও তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উদ্যোক্তারা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে যে সরকার রয়েছে এবং যেসব নীতি প্রণয়ন করছে তার স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্যোক্তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অনুসরণ করছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতেও বিনিয়োগ প্রস্তাবের বড় ধরনের উন্নতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি আরও বলেন, যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সেগুলোর মধ্যে নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবের সম্ভাবনা খুবই কম। যাদের আগে থেকেই বিনিয়োগ রয়েছে এবং যারা আগে থেকেই নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন তারাই নতুন করে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে তিনি ধারণা করেন।

বিডা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৫৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১৯ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা ও বিদেশি ৩৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব বিনিয়োগ প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশি বিনিয়োগের ৫২ হাজার ৭০২ জন এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৭৯ জন লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে।

বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে জুলাই মাসে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব আসলেও আগস্টে এটি কমে হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার মতো। সেপ্টেম্বর মাসে কিছুটা বেড়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।

অপরদিকে, ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন মাসে ২২০টি দেশি প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি ৩৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৪৮ কোটি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। এসব প্রস্তাবনার মাধ্যমে ৪৭ হাজার ১০৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে বিডা সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে সেবা খাতে। এরপর রাসায়নিক শিল্প খাত, খাদ্য এবং এ সংক্রান্ত শিল্প খাত, প্রকৌশল শিল্প খাত ও বস্ত্র খাতে এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।

দেশের উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জমির অপর্যাপ্ততা, অবকাঠামোগত সমস্যা, গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট, সরকারের নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।  

সূত্র : আমার দেশ

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।