ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রতিকূলতা ছাপিয়ে ইউরোপে বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
প্রতিকূলতা ছাপিয়ে ইউরোপে বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি  ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার। জিএসপির আওতায় ইউরোপজুড়ে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশ।

‍গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেখানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। মানুষ খরচ কমাতে ব্যয় কমিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। এ সময় বাংলাদেশেও বৈরী অবস্থা বিরাজ করছে। তারপরও ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ দশ মাসে ইউরোপে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট সাত হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক শতাংশের কিছু কম। আগের বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ১০ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল সাত হাজার ৭৩৩ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের।

ইউরোপের বাজারে প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন, দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতার পরও এক শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এ খাত। এ সময়  ইউরোপে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ তুরস্কের রপ্তানি সংকুচিত হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশটির।

তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ১০ মাসে চীন ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ২ হাজার ১৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। আগের বছর রপ্তানি করেছিল দুই হাজার ১৫৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পোশাক।

ইউরোপে দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ।  গত দশ মাসে ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে এক হাজার ৬৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৬২৮ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক।

ইউরোপে তৃতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ তুরস্ক রপ্তানি করেছে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার। আগের বছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল ৯১০ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ২০২৪ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ১০ মাসে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কমেছে।

করোনা পরবর্তী ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল। কিন্তু এক বছর না যেতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে পুরো ইউরোপ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে। এতে মানুয়ের জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যায়। ফলে মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দেয়। কিন্তু ইউরোপে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হচ্ছে, যা ইতোমধ্যে ইতিবাচক ধারাতে ফেরা শুরু করেছে। একই সময় বাংলাদেশে উচ্চ জ্বালানি মূল্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ে। এর মধ্যেও প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়।

বিষয়টি মন্দের ভালো মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সক্ষমতা ও ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়া দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আরও ভালো করার সুযোগ ছিল বলে তারা মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএয়ের সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তা খুবই সামান্য। ইউরোপে আমাদের ১০ থেকে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকে। সেখানে শুল্কবিহীন, কোনো ট্যাক্স দেওয়া লাগে না, তারপরও যদি ভালো করতে না পারি- তাহলে তো হলো না। ইউরোপের বাজারে আমরা প্রথম দ্বিতীয় থাকবো, এটাই স্বাভাবিক। সেই হিসেবে আমাদের চেয়ে অন্যদের কাছে থেকে তৈরি পোশাক বেশি কিনছে।

আমরা প্রতিযোগিতায় টেকার জন্য বা ভালো করার জন্য বা ক্যাপাসিটি পূরণ করার জন্য কম প্রাইজেও কার্যাদেশ নিচ্ছি। আমি মনে করি, ইউরোপে আমাদের আরও ভালো করা উচিত। ইউরোপের বাজারে যদি আমরা ভালো না করতে পারি তাহলে কোথায়, কবে ভালো করবো- বলেন এ উদ্যোক্তা।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গিয়েছিল। আবার প্রতিযোগিতাও বেড়ে গিয়েছিল। তার মানে হলো আমাদের ক্যাপাসিটি আগের মতোই রয়ে গেছে। ওদের ইমপোর্ট কমে গেছে। এতে আমাদের ক্যাপাসিটি পূরণ করার তাগিদ অনেক বেশি হয়ে গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ওরা তো চাইবেই কম দামে পোশাক কিনতে, সেটা আমিও চাইবো। তাই হয়েছে।  তুলনামূলক কম প্রাইজে কার্যাদেশ নিতে হয়েছে। এর ফলে যে উৎপাদন করেছি তাতে মোট রপ্তানি আয়ে আরও খানিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারতো।

আমি মনে করি এ কম্পিটিশন চাইলেই বন্ধ করতে পারবো না। সেজন্য আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমরা কীভাবে মূল্য প্রতিযোগিতায় সক্ষম হবো, কীভাবে আমাদের অতিরিক্ত খরচগুলো কমাতে পারি, আমরা কীভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি; সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেই চিন্তা করে আমাদের মুনাফার হারটা বাড়াতে হবে। শুধু বায়ারকে চাপ দিয়ে দাম বাড়িয়ে দেবে এমনও না। তবে নৈতিক মিনিমাম একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকতে হবে বলেন- বিজিএমইএর এ পরিচালক।

বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। দেশটি ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে ছয় নম্বরে। বাংলাদেশ যেখানে দুই নম্বরে। তবে জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের দ্বিগুণ ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। যদিও বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করলেও ভিয়েতনামের রপ্তানি সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বাংলাদেশের আরও খানিক সতর্ক হওয়া ও তৈরি পোশাক রপ্তানির দক্ষতাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
জেডএ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।