ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা পেতে অপেক্ষা আরও এক বছর

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
চট্টগ্রামে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা পেতে অপেক্ষা আরও এক বছর ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বহির্বিভাগে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত নতুন-পুরোনো মিলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার রোগী। আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীদের ৬০ ভাগই নারী।

রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে গত বছর ৩ হাজার ১৩১ জন পুরুষ রোগী চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত।

এছাড়া ২ হাজার ৫২০ জন নারী রোগী চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ২৪ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। অপরদিকে অন্তঃবিভাগে ৩ হাজার ১০৮ জন ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতাল থেকে কেমোথেরাপি পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ জন, রেডিওথেরাপি পেয়েছেন ৭৭৫ জন। ব্র্যাকিথেরাপি পেয়েছেন ৬০০ জন।  

ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জরায়ুমুখের ক্যান্সার আক্রান্ত, খাদ্যনালির ক্যান্সার আক্রান্ত ১৭ শতাংশ, মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সার আক্রান্ত ১৫ শতাংশ, স্তন ও ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত ১২ শতাংশ।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বংশগত, পরিবেশগত ও কিছু জীবনাচরণের কারণেই ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। ত্বকের ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালির ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, পাকস্থলীতে ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, জরায়ুমুখের ক্যান্সার, পায়ুপথের ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধীনে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার হার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে বেশি ৪০ থেকে ৬০ বছর এবং ৫০ থেকে ৬০ বছর সময়ের মধ্যে। এই দুই বয়সসীমায় আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ।

চমেক হাসপাতালে তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে একটি কোবাল্ট রেডিওথেরাপি যন্ত্র রয়েছে। এটি দিয়ে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে টু ডাইমেনশনাল এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া যায়। এ জন্য খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার আক্রান্তদের ব্র্যাকিথেরাপি নিতে হয়। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে ব্র্যাকিথেরাপি যন্ত্র বসানো হয় হাসপাতালে। গত বছরের জুন মাসে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। সরকারিভাবে খরচ দেড়-দুই হাজার টাকা হলেও ঢাকায় বেসরকারিভাবে ব্র্যাকিথেরাপি নিতে প্রতি সেশনে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার বেশি। এ ছাড়া ক্যান্সার শনাক্তে প্যাট-সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা নেই চট্টগ্রামে। ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করতে গেলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগ শনাক্তে নেই মলিক্যুলার ল্যাবও। চিকিৎসকরা বলছেন, মলিক্যুলার ল্যাবের মাধ্যমে যে ফল পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট থেরাপি দেওয়া যায়।

চমেক হাসপাতাল এলাকায় ৩০ কাঠা জায়গায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে আলাদা ক্যান্সার ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় থেকে সপ্তম তলা জুড়ে থাকছে ১৮০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার ইউনিট। যেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, ব্র্যাকিথেরাপি এবং অনকো-সার্জারিও থাকবে। প্যাট-সিটি স্ক্যান যন্ত্র স্থাপিত হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় রোগীরা পরীক্ষা করতে পারবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন করছে ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) সাইক্লোট্রন ও প্যাট-সিটি সুবিধাদি স্থাপন’ প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার সক্ষমতা অনেক বাড়বে। সাইক্লোট্রন যন্ত্র কৃত্রিম রেডিওআইসোটোপ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা প্যাট-সিটি স্ক্যানের জন্য বিশেষ করে থাইরয়েড, যকৃত, কিডনি এবং হাড়ের ক্যান্সার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রপাতি দেশে স্থানীয়ভাবে রেডিওআইসোটোপ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। এতে ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ এবং প্রতীক্ষার সময় কমাবে।

গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে গত নভেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্র। সরকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রেডিওকেমিস্ট্রি মেশিন, অটো এফডিজি ইনজেক্টর এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি কিনেছে।  

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম মঞ্জুর আহসান বাংলানিউজকে বলেন, সাইক্লোট্রন ও প্যাট-সিটি সুবিধার এই প্রকল্পটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু ক্যান্সার রোগীদের সময়মতো সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নয় বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ওয়ার্ডে বর্তমানে শয্যাসংখ্যা ৪৮টি। চিকিৎসা সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। রোগীরা রাত ১২টা পর্যন্ত রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। এছাড়া কেমোথেরাপিও দেওয়া হচ্ছে। নির্মাণাধীন ১৮০ শয্যার বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিটের কাজ শেষ হলে নতুন কিছু সরঞ্জাম যুক্ত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।