ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিশ্ব ইজতেমা

আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
আম বয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব মুসিল্লরা।

গাজীপুর: বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মাগরিবের পর আম বয়ান শুরু করেন ভারতের মওলানা আহম্মেদ ইব্রাহীম দেওলা। তার আম বয়ানে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মেজবাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, চাঁদের হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শুরু হয়ে গেছে। এই দিনে ভারতের মওলানা আহম্মেদ ইব্রাহীম দেওলার আম বয়ানে এবার বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

তিন রাত ও তিনদিন পর আগামী রোববার (১২ জানুয়ারি) জোহরের আগে আখেরী মোনাজাতে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। শুক্রবার দেশের বৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমার ময়দানে। এবারের বিশ্ব ইজতেমা ৫৫ তম।

ইজতেমার আয়োজকরা জানান, প্রথম পর্বের পর চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। পরে একইভাবে ১৯ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের (২০২০ সালের) বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের ইজতেমা পরিচালনা করছেন জোবায়েরপন্থিরা এবং দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করবেন সাদপন্থিরা।

বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বেই দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন। একইসঙ্গে অংশ নিতে পারবেন বিদেশি মুসল্লিরাও। তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমার ময়দানে সব কাজ করা হয় পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন বিশ্ব ইজতেমায়। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রতিজেলার মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারিত থাকে। এ স্থানকে খিত্তা বলে। প্রথম দফায় অংশগ্রহণকারী ৬৪ জেলার মুসল্লিরা নিজ নজি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন

শুক্রবার বৃহত্তর জুমার নামাজ:

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বিরা জানান, শুক্রবার দেশের সর্ব বৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশের মওলানা জোবায়ের। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ জুমার নামাজে শরিক হবেন। ইতোমধ্যে অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান নিচ্ছেন।

ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃংখলা জোরদার করা হয়েছে। পাঁচ সেক্টরে ভাগ করে পাঁচ স্তর নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি স্তর বা সেক্টরের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই দুই পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আট হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চার শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের করা হয়েছে। ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগল্স, পুলিশ ও র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ-টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসল্লিদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল ও বিশেষ নিরাপত্তা যন্ত্র আর্চওয়ে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছেন। তারা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেকপোস্ট, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য ২টি পয়েন্টে হেলিপ্যাড ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও আটটি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও তারা ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র‌্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
আরএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।