ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৫১
শিবচর (মাদারীপুর)-মুন্সিগঞ্জ= ৪৫.৯৯ কিমি

মোজা সমেত স্যান্ডেলটা রুমের বাইরে রেখেই ঘুমিয়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি মোজা উধাও।

সন্ধ্যায় আশপাশে যাওয়ার জন্য মিরাজ ভাই চপ্পল দিয়েছিলেন একজোড়া। সেটার একপাটিও নেই। ইতিউতি তাকাতেই দেখি কয়েকটা কুকুরছানা হুটোপুটি করছে মোজা নিয়ে। ব্যাকপ্যাক থেকে নতুন একজোড়া মোজা বের করে গলিয়ে নিলাম পায়ে। গতকাল রাতের আঁধারে বাড়ির পাশের নদীটা ঠিক ঠাহর করতে পারিনি। সকালে দেখলাম নদী বেশ বড়-সড়ই। অল্প দূরেই অবশ্য গজিয়েছে চর। স্থানীয়রা একে বলেন মরা পদ্মা। এখন মরা পদ্মা হলেও এককালে এর পেটেই গিয়েছে মিরাজ ভাইদের আদি বাড়ি।

শিবচর পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসেছিলেন মিরাজ ভাই। হাঁটা শুরু করতেই বললেন উনিও হাঁটবেন কিছুদূর। প্রথমেই পেলাম দ্বিতীয় খণ্ড নামক একটা জায়গা। প্রথম খণ্ডটা কোথায় সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই মিরাজ ভাইয়ের। খালের একেবারে পাশ ঘেঁষা রাস্তা। বিশাল সব বাঁশঝাড় মাঝে মাঝেই মাথা নুইয়ে রেখেছে রাস্তার উপর। এই সকালে রাস্তাটা মোটামুটি জন-মানবহীন। কাদিরপুর, মানিকপুর মোড় হয়ে মুন্সী কাদিরপুর যেতে খুব বেশি সময় লাগলো না। টিনের দোতলা বাড়িগুলো বেশ মনকাড়া। এই বাড়িগুলোতে প্রচুর জানালা।

সুদৃশ্য সব টিনের বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ

একে একে পার হলাম কুতুবপুর বাজার, ঘরামীকান্দি, শিকদার কান্দি, বাংলা বাজার। 'ঘাটে নি?'- যাত্রাপথে এই প্রশ্ন করে ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলছে ভ্যানওয়ালারা। দোকানের প্রোপাইটরদের নাম পড়ে মনে হলো মাতব্বর আর মোড়ল এই দুটো নাম বেশ কমন এদিকে।

দ্রুত পা চালিয়ে চলে এলাম কাঁঠালবাড়ী। ফের পদ্মা পাড়ি দিতে হবে আজ। আমি স্পিডবোটে পার হয়ে সময় বাঁচাতে চাইলেও আমাকে স্পিডবোটে কোনোক্রমেই যেতে দেবেন না মিরাজ ভাই। ওনার পীড়াপীড়িতে ফেরিতেই উঠতে হলো। এক, দুই এবং তিন নম্বর ফেরিঘাটে ফেরি না পেয়ে উঠলাম ৪ নম্বর ঘাট থেকে৷ তাও একেবারে শেষ মুহূর্তে দৌড়ে গিয়ে। শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োয় মিরাজ ভাইয়ের কাছ থেকে ভালোমতো বিদায়ও নেওয়া হলো না। এই রুটে ফেরিতে আমার কম যাওয়া হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট আমার বেশি চেনা। ফেরির এককোণে বসে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছিলাম। পদ্মা সেতুর কাজও দেখলাম বেশ খানিকক্ষণ।

কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ইলিশ।  ছবি: বাংলানিউজ

শিমুলিয়া ফেরিঘাটে নামতেই যেন ধূলার সাগরে গিয়ে পড়লাম। পদ্মার এপাশ থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলা। উপজেলার নাম লৌহজং। সামনে এগিয়েই শর্টকাট নেওয়ার জন্য ধরলাম ছোট একটা রাস্তা। টিনের দোতলা বাড়িগুলো এদিকে এসে পেয়েছে অন্য মাত্রা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাড়িই দেখছি খালি। পাকা বাড়ির সংখ্যা খুবই কম। হলদিয়া বাজার ছাড়িয়ে তিন দোকান নামক জায়গায় প্রায় বিশ-পঁচিশটা দোকান। কনকসার বাজারের কাছাকাছি থেকে আবার ডানদিকে হাজির হলো পদ্মা।

বাড়ি-ঘরের ফাঁক দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সে। বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘরটা কনকসার বাজারেই। ঘোড়দৌড় বাজার আর মালির অংক নামক দুটো ইন্টারেস্টিং নামের বাজারে বেশ ক'টা বাকরখানির দোকান। আজ দফায় দফায় বাখরখানিই খাওয়া হচ্ছে বেশি। কলিকাতা ভোগদিয়া বাজারের এক ছোট চত্বরে লেখা- হে পথিক একটু বসুন। ইচ্ছে থাকলেও সময় না থাকায় সেটা আর হয়ে উঠলো না।

ঘোলতলী বাজারের পর থেকে বিলের মাঝে বিশাল সব সুদৃশ্য ভবন নজর কাড়ছিল। ভবনের সাথেই পাশের বিলে নামার জন্য বাঁধানো ঘাটও প্রায় সব বাড়িতেই। বিলগুলোতে পানকৌড়ির রাজত্ব। খেতের পাড়ের পর প্রবেশ করলাম টঙ্গীবাড়ী উপজেলায়। বালিগাঁও বাজারের শেষ মাথায় দারুণ দক্ষতার সঙ্গে স্কেটিংরত এক বাচ্চার দেখা মিললো। পরনের জিন্স শতছিন্ন। হয়তো মাঝে মাঝে পড়ে গিয়েই এই অবস্থা। বলই ছাড়িয়ে চান্দের বাজারে চা পানের সময় এক লোক এসে চা বিক্রেতাকে আদেশ দিল চল্লিশ টাকার চা দেওয়ার জন্য৷ চা বিক্রেতা আর আমি দুজনেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম। সেগুনতলা গিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য বড় রাস্তা ছাড়লাম। সোনারং হয়ে বাহেরপাড়ার পর প্রবেশ করলাম মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায়। আটপাড়ার পরে প্রকাণ্ড এক দীঘি। নাম সুখবাসপুর দীঘি। হাতিমারা পার হয়ে সিপাহীপাড়াতে বিশাল জ্যাম। বল্লাল বাড়ী পার হয়ে মুক্তারপুরের কাছে চলে এলো দিগন্ত। কিছুটা পথ ওর সঙ্গে হেঁটে আজকের দিনের মতো হাঁটায় ইস্তফা দিলাম।

হে পথিক একটু বসুন।  ছবি: বাংলানিউজ

দিগন্তের সঙ্গে অটোতে চেপে গেলাম মুক্তারপুর ব্রিজে। চারপাশটা এখান থেকে দারুণ দেখায়। বরিশালগামী লঞ্চগুলো এই পথেই যাওয়া-আসা করে। পরের গন্তব্য মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল। নেমেই ভরপেট মাংস-পরোটা খেয়ে চায়ের অর্ডার দিতেই চা নিয়ে এলো বিজয় নামের দশ-এগারো বছরের এক পিচ্চি। কনুইয়ের নিচ থেকে দুই হাতই কাটা হলেও এক অদ্ভুত কায়দায় ট্রেতে করে চা নিয়ে এলো সে। কাটা ঘুড়ি ধরতে গিয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে হাত দুটো হারায় সে। কাটা দুই হাতেই সে সাঁতার কাটে, কাজ করে দিব্যি। কিছুটা সময় লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরাঘুরি করে ওখান থেকে দিগন্তের বন্ধুদের সাথে সোজা ইদ্রাকপুর দুর্গে। রাতে দুর্গ খোলা না পেলেও আশপাশটা ঘুরে চিত্ত রঞ্জনের দোকানে দই-মিষ্টি খেয়ে দিগন্তের বাড়ির পথ ধরলাম সাড়ে আটটা নাগাদ।

চলবে...

আরও পড়ুন...

** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।