দিন ১৪
জুমার পাড়া (তানোর, রাজশাহী)-রাজশাহী= ৪০.৪০ কিমি
ঋতু হিসেবে শীত আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। শীতের বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে আসা কুয়াশাও ভালো লাগে বেশ।

মহিষের গাড়ির দেখা মিলেছিল মোহনপুরে
আরও কিছুদূর এগিয়েই মুণ্ডুমালা নামক বেশ বড়-সড় বাজার। এখান থেকে ডানে গ্রামের ভেতরের রাস্তা ধরে পথ। দু'ধারে প্রচুর আম গাছ। পচান্দর নামক এক জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের এক দোকানে চায়ে চুমুক দিতে দিতে গ্রাম্য সালিশ দেখছিলাম। বউ আর শাশুড়ি মিলে জামাইকে ধুমসে পিটিয়েছে। তারই বিচার করতে এসেছেন এলাকার মেম্বার। মেম্বারের সামনেই স্বামীকে সমানে ধমকাচ্ছে বউ। সালিশ থেকে দেহ-মন উঠিয়ে খানিক এগোতেই ডাঙাপাড়া। সোজা চলে মোহনপুর মোড় থেকে বামে বাঁকনিলাম। আবার মেঠোপথ। এখানেই দেখা মিললো মহিষের গাড়ির।
মেঠপথ দুদণ্ড শান্তি দিচ্ছিল চলতিপথে
বাড়ির দেয়ালে প্রচুর আলপনা দেখেছিলাম নাচোলের গ্রামগুলোতে। আজও বেশ কিছু বাড়িতে সেই দৃশ্য। রাস্তার ধারের সুবিশাল সব আম গাছ ছায়া দিয়েই যাচ্ছে। মেঠোপথে আরো দুই কিলোমিটার এগিয়ে উঠে পড়লাম পাকা রাস্তায়। সামনেই পেলাম তাঁতিহাটী কমিউনিটি ক্লিনিকের দারুণ স্থাপনা। এত ছিমছাম কমিউনিটি ক্লিনিক সহজে চোখে পড়ে না। পলাশী নামক জায়গায় খানিকটা জিরিয়ে নিলাম। এখানেও ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আছে আম্রকানন। কিছুটা সময়ের জন্য তানোর উপজেলা ছেড়ে গোদাগাড়ী উপজেলায় ঢুকে পড়েছিলাম। কালীগঞ্জ-কাকন হাটের রাস্তা নিতেই আবার তানোর উপজেলায়। সরনজাই মন্ডল পাড়া থেকে রাস্তা আবার হাতের ডানে মোড় নিল।
রাজশাহীর আম চত্বর
মির্জাপুর পার হয়ে দেওতলা মোড় থেকে রাজশাহী-তানোর সড়কে উঠে পড়লাম। এ রাস্তার প্রথম বাজারটা চান্দুড়িয়া বাজার। জোহাখালী খাল পেরোতেই আবার সঙ্গী হলো বুড়ো সব আম গাছেরা। অন্য জেলায় রাস্তার পাশে থাকে শিশু, অর্জুন, কড়ই, ইউক্যালিপটাস, ইপিল ইপিল ইত্যাদি গাছ। রাজশাহী-চাঁপাইয়ে সে জায়গা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আম গাছের দখলে। নাইস গার্ডেন নামক বড়সড় একটা পিকনিক স্পট পার হতেই রাস্তার উপর পড়লো এক সাপ। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির হর্ন শুনে দিশেহারা হয়ে আমার পায়ের ফুট দুয়েক সামনে থেকেই সটকে পড়লো। সাপ দেখলেই আমার দু’জনের কথা খুব মনে পড়ে। একজন রুপা দি আর অন্যজন কায়েস ভাই। একজনের সাপের প্রতি দারুণ ভালোবাসা আর অন্যজনের দারুণ ভয়।বাগধানী মোড় থেকে পবা উপজেলা। তেঘোর, বাগসারা মোড় অতিক্রম করে এগোলাম দুয়ারী মোড়ের দিকে। বিশাল এক পেঁপে বাগান পড়লো খানিক পরেই। বালিকার মোড়েই দেখা মিললো এ অঞ্চলের বিখ্যাত তুফান ঘটকের সাইনবোর্ডের। হিমালয় নামের এক কোল্ডস্টোরেজ দেখে হেসে উঠলাম। কোল্ড স্টোরেজের জন্য এর চেয়ে জুতসই নাম বুঝি আর হয় না।
বায়া বাজারের কাছেই এসে উঠলাম রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে। ভূগরইল নামক বাজার পেরিয়ে পবা উপজেলা পরিষদের ভবন। এর পরেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তোরণ। রাজশাহীর সিগনেচার আম চত্বর পেরুতে পেরুতে প্রায় চারটে। পোস্টাল একাডেমি হয়ে রেলস্টেশনের কাছে আসতেই শাহাদাত ভাই হাজির। ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রতিদিনই ফোনে কথা হয়। দেখা আর হয় না। এ যাত্রা ওনার বাড়িতেই থাকা। আজকের হাঁটার ইস্তফা এখানেই।
ক্লান্তি ঝেড়ে গোসল সেরে ওনার বাইকে সোজা প্রেসক্লাব। সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও আদ্যোপান্ত নিয়ে কথা বলার ফাঁকেই হাজির কান্তি, হিয়া আপু আর মুসা ভাই। সাহেববাজারে গিয়ে মাল্টা চাপান করে একে একে বিদায় নিল বাকিরা। শাহাদাত ভাইয়ের বাইকে চেপে এবার সিঅ্যান্ডবি মোড়ে। রাজশাহী মেডিক্যালের ইন্টার্নি ডাক্তার জিনাত আপু আর তার দুই বান্ধবীর সঙ্গে রানা মিষ্টি ঘরের মিষ্টি খেতে খেতেই গল্প সারা। ওনাদের নাইট ডিউটি থাকায় বিদায় নিতেই আমরাও ফেরার পথ ধরলাম।
চলবে...
আরও পড়ুন>>>
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
এএ