ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

১১ ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই বেয়ে ৮৬৫০ ফুট উচ্চতার নামরুংয়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
১১ ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই বেয়ে ৮৬৫০ ফুট উচ্চতার নামরুংয়ে নামরুং পাহাড়। ছবি: বাংলানিউজ

আজ যাত্রা নামরুংয়ের দিকে। এমনিতে গতকালের নির্ধারিত জায়গা ড্যাং থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগের পেওয়াতে থেকেছি। তার উপর আজকের পথ সম্বন্ধে গাইডদের ধারণা কম। সকালের আলো পাহাড় চূড়া ছুঁতে না ছুঁতেই আমরা ড্যাংয়ে এসে পৌঁছালাম। সেখানে চা বিরতি। ড্যাং এর পরে ভীষণ এক উৎরাই। একেবারে নেমে গেলাম বুড়িগন্ধাকীর পাড়ে। এরপর ভয়াবহ চড়াই।

এ ওঠার যেন কোনো শেষ নেই। মুহিত ভাই এর মধ্যেও রসিকতা করে বলেন, যতটুকু নামিয়াছ উঠিতে হইবে তার দ্বিগুণ।

আমরাও বিনা বাক্য ব্যয়ে শুধু উঠছি। প্রায় এক ঘণ্টা লাগলো চড়াইটুকু উঠতে। তারপর ছোট্ট বিরতি। টাটকা আপেল কেনা হলো। খেয়ে আবারও চলা। অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলের গাছগাছালি এখন আর নেই। জায়গায় জায়গায় পাইন গাছ চোখে পড়ছে। পাহাড়ি ঢাল ধরে আমরা চলেছি। চারপাশে কিছু দূরে দূরে একটি দু’টি বসতবাড়ি। পাশে এক চিলতে জমিতে যব অথবা ভুট্টার চাষ হচ্ছে।

নামরুং পাহাড়ে ওঠার সময় চোখে পড়ে একটি দু’টি বসতবাড়ি ।  ছবি: বাংলানিউজ আমরা দুপুরের খাবারের জায়গা খুঁজছিলাম। এ সময় চলে এলো ভিজাম। বড় কোনো জনপদ নয়। ওই একটিই লজ। লজের মালকিন সমাদর করে বসালেন। চিকেন নেই। আলুভর্তা ডিম ভাজি ডালের আয়োজন। মিষ্টি রোদে মুহিত ভাইসহ অন্যরা বসে গেলেন দাড়ি কামানোর কাজে। আমিও রোদে বসে ঝিমিয়ে নিলাম। দুপুরের খাবারের কথা মনে থাকবে শুধু ডালের গুণে। গৃহকর্তা বাংলাদেশি পরিচয় শুনে নেপালি স্টাইলে না রেঁধে একেবারে আমাদের মতো করেই ঘন ডাল রেঁধেছেন। জানা গেলো মালয়েশিয়ায় প্রবাসী জীবনে বাংলাদেশিদের সঙ্গে কাটানোর ফলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ভালোই জানা আছে তার।

নামরুংয়ে ওঠার সময় চোখে পড়ে তার সৌন্দর্য।  ছবি: বাংলানিউজখাওয়ার পর সেই একটানা চলা। বিকেলের দিকে পৌঁছে গেলাম গ্যাপ। আজ অন্যদিনের চেয়ে বেশি চড়াই-উৎরাই ছিল পথে। গ্যাপে জিরিয়ে নেওয়ার ফাঁকে সেখানকার লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা গেলো নামরুং আরও দুই ঘণ্টার রাস্তা। সামনেই বেশ ঘন বন। বিকেল দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত পা লাগালাম। পথিমধ্যে অবশ্য জঙ্গলের মাঝে একটি লজ আছে। কিন্তু আজ আমাদের নামরুং পৌঁছাতে হবেই হবে।
শেষ বিকেলের আলো ঘন বনের ফাঁকে এক চিলতে এসে পড়ছে। আমরা ছাড়া এ পথে আর কেউ নেই। আজ অরণ্য ব্যাকুল অচেনা পাখির গুঞ্জনে। আমাদের সেসবে কান দিলে চলবে না। দ্রুত আরও দ্রুত চলতে হবে। কিন্তু থামতেই হলো। বিশাল সাইজের কয়েকটি সোনালি মুখ পোড়া হনুমানের আড্ডার মাঝে আচমকা আমরা উপস্থিত হওয়ায় দলছুট হয়ে তারা ভোঁ দৌড় লাগালো।

নামরুংয়ের গাঁ ঘেষে জন্মে ওঠা কিছু বুনো ফল।  ছবি: বাংলানিউজছবি তোলায় ভীষণ আপত্তি তাদের। এক সময় জঙ্গলের সমতল অংশ শেষ হলো। আমরা চড়াই উঠতে শুরু করলাম। তখনও জানি না এর শেষ কোথায়। সন্ধ্যার আর বেশি বাকি নেই। একেবারে জান বের করে দেওয়া চড়াই। আমরা এখন মোটামুটি আড়াই হাজার মিটারের কাছাকাছি আছি। আজ রাতের আবাস নামরুংয়ের উচ্চতা ২ হাজার ৬৩০ মিটার। অল্টিচিউড সিকনেস হওয়ার ঝুঁকি সাধারণত এই উচ্চতা থেকেই শুরু হয়। কোনো বিশ্রাম না নিয়ে একটানা চড়াই উঠে যাচ্ছি। দেশে কঠোর পরিশ্রমের বেশ ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। একেবারে সন্ধ্যার মুখে আমরা এক জায়গায় বিরতি দিলাম।  
জানা গেলো এখান থেকে নামরুংয়ের লজ আরও প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ। এখন বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। হেড লাইট বের করে প্রস্তুত হয়ে নিলাম। বনপথ কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। হেড লাইটের আলোয় আশপাশে মেঘ কণা ছুটে যাওয়ার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে।

নামরুংয়ের লজ।  ছবি: বাংলানিউজঅবশ্য এই উচ্চতায় এটিই স্বাভাবিক। জয় মাল্লা লজ ঠিক করতে আগে পৌঁছে গিয়েছিলো নামরুং। সে সব ঠিকঠাক করে আবার ফিরে এসেছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর অবশেষে আলো দেখা গেলো। টানা এগারো ঘণ্টা ট্রেকিং শেষে আমরা পৌঁছালাম। এখানকার আলো ঝলমলে সাজ-সজ্জার লজ দেখে আমরা অবাক। অবশ্য আমাদের লজ তার তুলনায় খুবই সাধারণ। কিন্তু এখন সেসব ভাবার সময় নেই। টানা এগারো ঘণ্টা চড়াই-উৎরাই ভাঙার ধকল পুরো শরীরজুড়ে।

পাহাড়ের গায়ে ঝোলা নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ

কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা

চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত

ধুলোবালি গিলতে গিলতে ট্রেকিং শুরুর আরুঘাট (পর্ব-৩)

হিমালয়ের মানাসলু ট্রেকিংয়ের অদম্য নেশায় যাত্রা (পর্ব-১)    

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।