ভোরের আলো ফুটতেই আবার পথে বেরোনোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো। গন্তব্য খোরলাবেসি, ৯৭০ মিটার।
অবশ্য আমাদের চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই অবাক সৌন্দর্যের সব ঝরনারা রাস্তার পাশে অভ্যর্থনা জানাতে শুরু করলো।
ঝরনা। ছবি: বাংলানিউজ
বুলডোজার দিয়ে রাস্তা তৈরির কাজ চলছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সে পথটুকুও শেষ। এবার শুরু হলো মূল ট্রেইল। কখনো সরু ফিতার মতো কখনো পাথুরে অমসৃণ এবড়ো থেবড়ো। উপর থেকে একের পর এক খচ্চর বাহিনী আসছিলো মাল নিয়ে বা নিতে। তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছিলো।এ সময় সরে দাঁড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ। এ ধরনের পাহাড়ি রাস্তায় খচ্চর, গাধা বা ইয়াক বিপরীত দিক থেকে এলে কখনই খাদের পাশে দাঁড়ানো যাবে না। তাদের ধাক্কায় খাদে পড়ে যাওয়ার বহু দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। মুহিত ভাই এসব কথা আগেই পই পই করে বলে দিয়েছিলেন।
বান্দরবানে আমরা ঝরনা দেখার জন্য কতই না কষ্ট করি। এখন যে ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি তার সামনে দাঁড়িয়ে সে কথা মনে করে হাসি পেলো। এ যে সাক্ষাৎ একেবারে আকাশ থেকে নেমে এসেছে। আমরা অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। পথের তাড়া অবশ্য বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দিলো না। আজ আমাদের হাঁটার গতি গতকালের চেয়েও বেশি। বেলা ১১টার মধ্যেই আমরা চলে এলাম মাচাখোলায়।
পর্যটকদের জন্য সাইনবোর্ড। ছবি: বাংলানিউজ
এখানে আমাদের লাঞ্চ বিরতি। মেন্যু সেই আগের ডাল-ভাত-চিকেন সবজি। এই ট্রেইলে জনপদগুলি আড়াই থেকে থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। কখনো তার আগেই পাওয়া যাবে। আমরা দুই ঘণ্টা এখানে শুয়ে-বসে খেয়ে কাটালাম। কারণ আজকের চূড়ান্ত গন্তব্য খোরলা বেসি আর দুই ঘণ্টা হাঁটলেই। জমজমাট লাঞ্চের পর আবার বুড়িগন্ধাকীর পাড় ধরে অলস হাঁটা আমাদের। কটকটে রোদ আকাশে। ফলে কিছুক্ষণ চড়াই উৎরাই বাইলেই ক্লান্তি এসে উঁকি দেয়। অগত্যা কিছুক্ষণের পানি পানের বিরতি।এভাবে দুপুরের মধ্যেই আমরা চলে এলাম খোরলা বেসি। এর উচ্চতা ৯৭০ মিটার। ঠিক হলো পাশের ঝিরিতে গোসল করবো। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ছুটলাম গোসলে।
ঝুলন্ত সেতুতে অভিযাত্রী সদস্য। ছবি: বাংলানিউজ
কিন্তু পানি ছোঁয়াতেই পুরো শরীর যেনো কেঁপে উঠলো। হয়তো দূরের কোনো গ্লেসিয়ার থেকে জল বয়ে এনে ফেলছে বুড়িগন্ধাকীতে। সমস্ত সাহস যোগাড় করে এক ডুব দিতেই পুরো শরীর হালকা। অনেকে হট ওয়াটার থেরাপি নেন। আমরা আইস ওয়াটার থেরাপি নিলাম!চিকিৎসা বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক জ্ঞান কি বলে জানি না, তবে বাত ব্যথার রোগীরা চেষ্টা করতে দেখতে পারেন। কিছুক্ষণ ঝাঁপাঝাঁপির পরে উঠে এলাম। লজে ফিরে তৈরি হয়ে ডাইনিং কর্নারে সরাসরি। একেবারে ডিনার পর্যন্ত চলবে কলব্রিজ আর আড্ডা বাজি। সঙ্গে বইও আছে। আমরা এ সময় নিয়ম করে চা পান করি। সামনের দিনে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরল পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
অভিযাত্রী দল। ছবি: বাংলানিউজ
খোরলাবেসি জায়গাটা বেশ জমজমাট। বেশ কয়েকটা লজ আছে। আজ সব লজই ট্রেকারে পরিপূর্ণ। রাত বাড়ছে। পাহাড়ের নিয়ম সাড়ে সাতটার মধ্যে ডিনার শেষ করতে হবে। আমাদেরও তার ব্যত্যয় ঘটালে চলবে না। অগত্যা ডিনার তারপর বিছানায় ঘুমের দেশে।বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এএ
চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত