ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

তপ্ত রোদে প্রাণ জুড়ালো সিকিম তৈসা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
তপ্ত রোদে প্রাণ জুড়ালো সিকিম তৈসা সিকিম তৈসা ঝরনায় মাতামাতি/ছবি: বাংলানিউজ

সাজেক, রুইলুই পাড়া (রাঙামাটি) থেকে ফিরে: পাহাড়ি সবুজ অরণ্যের আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে যখন সাজেক পৌঁছালাম, দুপুরের সূর্য তখন পুরোদমে তেজ দেখাচ্ছে। অগত্যা গোসল আর দুপুরের খাবারের পালা চুটিয়ে একটা ঘুমের সিদ্ধান্তই এসময় শ্রেষ্ঠ। কিন্তু গোসলে যাওয়ার আগেই ভ্রমণসঙ্গীদের মাঝে রব উঠলো- সাজেকে গোসল ঝরনার জলে!

ভয়ংকর সুন্দর উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে, বুক ভরে সতেজ শ্বাস নিয়ে তারপর আবার ঝরনার জলে গোসল? প্রকৃতির কোলে নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দিতে এর থেকে ভালো সিদ্ধান্ত আর কিছু হতে পারে না! তাইতো স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে শুরু হলো ঝরনার খোঁজ।

ঝরনার তালে তালে দুপুরের গোসল উবে গেছে।

তবে দুপুরের খাবারটা শেষ হতেই ঝরনা নিয়ে পাওয়া গেলো বেশ কিছু তথ্য। সাজেক থেকে খুব বেশি দূরে নয় এ ঝরনা। হাঁটাপথে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। কিন্তু এ ঝরনার নাম কি?

সিকিম তৈসা ঝরনার পথে/ছবি: বাংলানিউজ

সিকিম তৈসা ঝরনার পথে/ছবি: বাংলানিউজ

এর আগে সাজেক এসেছিলো সহযাত্রী মানস কুমার রয়। সে পথ দেখিয়ে ঝরনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করলেও বলতে পারলো না ঝরনার নাম। তাতে অবশ্য কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ঝরনার জলে গোসল করতে পারবে, এটাই যথেষ্ট!

দুপুর তিনটা। ঝরনায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই লাঠি যোগাড় করেছেন পাহাড়ি পথ হাঁটতে। পাহাড়ে এসে লম্বা বাঁশের লাঠি হাতে নেওয়ার মধ্যেও যে অসাধারণ এক তৃপ্তি আছে, তা বোঝা যায় এ লাঠিয়ালদের দেখে। তেমনই একজন আহাদ আকন্দ। বলেন, পাহাড়ে এসে পাহাড় ট্রেকিংয়ে লাঠি হাতে নেওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি পৃথিবীটা জয় করে ফেলবো।

সিকিম তৈসা ঝরনায়/ছবি: বাংলানিউজ

সিকিম তৈসা ঝরনায়/ছবি: বাংলানিউজ

পৃথিবী নয়, আপাতত ঝরনার উদ্দেশ্যেই রওয়ানা। রুইলুই পাড়ার রুইলুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বাম হাতে পেছনে ফেলে সরু পাহাড়ি রাস্তায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা। এলোমেলো বুনো ঝোপঝাড় সামনে থেকে সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা। পাহাড়ের চড়াই-উৎরায়ে একটু পর পরই পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। ভয়ংকর টার্নিং আর আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে যতই পথচলা, ততই বাড়ে সবুজের সমারোহ।

সবুজ সে আঁকাবাঁকা পথ ধরে প্রায় ১৫ মিনিট হাঁটার পর কানে ভেসে আসে পানি পড়ার ঝিরঝির শব্দ। আরে, এইতো ঝরনা! না, সহযাত্রী মানস রয় থামিয়ে দিয়ে বললো এটা ঝিরি। ঝরনার এখনো ঢের পথ বাকি!

একটু হতাশা আর অজানাকে জয় করার তীব্র আশা নিয়ে আবারো সবার পথচলা। নব আনন্দচিত্তে, ঝিরিপথ ধরে কাত হয়ে থাকা বড় বড় গাছের ফাঁক গলে, বিশাল বিশাল পাথর মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া। ঝিরিপথ আর বুনো রাস্তা দিয়ে ৮০-৮৫ ডিগ্রি খাঁড়া পাহাড় বেয়ে নামা-ঠায় রোমাঞ্চ আর অ্যাডভেঞ্চার মিলেমিশে একাকার।

সিকিম তৈসা ঝরনায় প্রাণ জুড়ানো শ্বাস/ছবি: বাংলানিউজ

সিকিম তৈসা ঝরনায় প্রাণ জুড়ানো শ্বাস/ছবি: বাংলানিউজ

হঠাৎই সামনে থেকে সহযাত্রী বন্ধু হাদিদ যাদিদের চিৎকার, ‘পাইছি! ইয়া হু...!’ তর আর সয় না। তাই সবারই পিচ্ছিল পথটা একটু টান পায়ে এগিয়ে যাওয়া এবার। তারপর..! তারপর? সম্ভবত আধ ঘণ্টার মধ্যেই দেখা মেলে ইয়া উঁচু থেকে পানি পড়তে থাকা ‘সিকাম তৈসা’ ঝরনার। নামটি বাতলে দিয়েছিলেন স্থানীয় রুন্ময় রিসোর্টের গাইড পাতান চাকমা।

দু’ধারে অবারিত সবুজ। তার মাঝখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ সুন্দর অমিয় ধারা। আশপাশের পুরো পরিবেশটা বুনো গন্ধে মাতানো। বরফ শীতল সে জলে দাঁড়িয়ে ইচ্ছে করে দু’চোখ দিয়ে গিলে খাই সব সৌন্দর্য! মুগ্ধতার রেশে এমনটাই বলছিলেন সহযাত্রী ইশতিয়াক আহমেদ।

সিকাম তৈসার পানি পড়ে দু’ধাপে। একটি গড়িয়ে আর আরেকটি শাওয়ারের মতো।  

ঝরনায় দাপাদাপি আর গোসলের পর খাঁড়া নেমে যাওয়া পাহাড়ের উঠে আসা পথের ট্রেকিংয়ের স্বাদ নিতে হলে পাড়ি দিতে হবে সিকিম তৈসা বা কমলক ঝরনার পথ।

শহুরে খোলস ছেড়ে প্রকৃতির মহানুভবতার কাছে আত্মসমর্পণের সে পথে আছে অপরূপ স্নিগ্ধতার রেশ, এক শান্তির পরশ আর অপরূপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।