ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

যে শহর ‘পাহারা দেয়’ কুকুর!

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
যে শহর ‘পাহারা দেয়’ কুকুর! পোখারায় পাহারাদার কুকুর। ছবি: বাংলানিউজ

নেপাল থেকে ফিরে: পুরো পোখারা শহর ঘুরে পুলিশের দেখা মিলল বার কয়েক। তাও তাদের বেশিরভাগের হাতেই অস্ত্রের বদলে ছোট্ট লাঠি। এই যখন অবস্থা সেখানে হোটেল কিংবা ভবনের সামনে দ্বাররক্ষী খোঁজা তো আশ্চর্যের বিষয়।
 

তবুও নিরাপত্তারক্ষী আছে বটে! কিন্তু তা কোনো দ্বিপদী প্রাণী নয়, চতুষ্পদী। হ্যাঁ, স্বর্গ শহরখ্যাত পোখারা শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা কুকুরের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে প্রতিরাতে ঘুমোতে যান।


 
২৪ ঘণ্টা শহরের এখানে ওখানে চোখ রেখে মানুষের বদলে কুকুরের নিরাপত্তারক্ষী সাজার এমন অহরহ নজির চোখে পড়ল।
 
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার পশ্চিমে শান্ত-ছিমছাম এই পর্যটন শহর। বিশাল ফেওয়া লেকের গভীর মমতায় আচ্ছন্ন থাকা এই শহরটাতে ঢুকতেই যে কারো মনে হবে-যেন দক্ষ শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির ফ্রেমে ঢুকে পড়েছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহরটা ততটা বড় নয়। সড়কও অতটা ঘিঞ্জিমার্কা নয়। একবার ঘুরে নিলে বেশ-পরের বার চোখ বন্ধ করেই চিনে যাওয়া যাবে গন্তব্যে। প্রস্থে ছোট বাড়িগুলোর উচ্চতাও কম। ওই তিন-চার তলার। প্রায় প্রতিটি বাড়ি-হোটেলের সামনের প্রাঙ্গণ আর বারান্দা ভরা নানান ফুলের টবে। সবসময়ই শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শরীর জুড়োনো কোমল হাওয়া।

প্রায় সব দোকান আর ঘরের সামনে দেখা মিলল কুকুরের।
 
পোখারায় পাহারাদার কুকুর।  ছবি: বাংলানিউজপোখারার লেকসাইড বারাহি পথ এলাকার একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁ সামলাচ্ছেন রোহিত ও তার স্ত্রী কমলা। সেই রেস্তোরাঁর সামনে ছোট্ট টেবিলের উপর বসে আছে একটি লাল রংয়ের কুকুর, শেকলবন্দি।
 
দোকানটির সামনে দিয়ে যেতেই কুকুরের আড়চোখে তাকানো শুরু। একটু পর পর ছোট সুরে হুংকার ছেড়ে যেন সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে মালিকের কাছে। তবে রোহিত রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাতেই কুকুর একদম চুপ। যেন সে ‍বুঝে নিল অনাহুত কেউ নয়, এ যে রেস্তোরাঁর অতিথিই।
 
রোহিতের কাছে কুকুরকে এভাবে সামনে বসিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, ‘সেই তো আমাদের নিরপত্তা প্রহরী। রাতে তার কাছে নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েই ঘুমোতে যাই। আর কুকুর প্রাণীটি আমাদের সবার প্রিয়। এই শহরের অধিকাংশ মানুষই কুকুর পালেন। তা শুধু নিরাপত্তার খাতিরে নয়, ভালোবাসার তাগাদায়ও। ’
 
পোখারায় পাহারাদার কুকুর।  ছবি: বাংলানিউজ‘তবে আমাদের কুকুর কারো ক্ষতি করে না। শুধু আমাদের সতর্ক করে দেয়। অতটুকুই তার কাজ। আর আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকতে হয় না। আমরা সবাই শান্তিপ্রিয় মানুষ। চুরি-ডাকাতির সঙ্গে তেমন পরিচয়ও নেই। তবুও নিরাপত্তার স্বার্থে কুকুরকে বসিয়ে দেওয়া। ’
 
শুধু পোখারা শহরের প্রায় সবখানে নয়, ২৫ কিলোমিটার দূরের সারাংকোটের প্রায় তিন হাজার ফুট উপরের পাহাড় চূড়ায়ও উঠে গেছে কুকুর। সেখানেও যে রয়েছে ঘরবসতি-আবাসিক হোটেল। ওখানেও কুকুরের ভূমিকা যথারীতি নিরাপত্তারক্ষীর।
 
সারাংকোটে সিমন ও সিজন নামের দুই শিশু একটি কুকুরকে নিয়ে খেলছিল। তাদের ধরা হলে জানায় প্রায় একই কথা। ‘কুকুর ভালোবাসি, আবার সে আমাদের নিরাপত্তা দেয়। ’-দুই ভাইয়ের তড়িৎ জবাব।
 
শেষের দিকে এসে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী রোহিতের কথাতে আবার ফেরা যাক। তার বলা ‘আমরা শান্তিপ্রিয়’ শব্দটার প্রমাণ পাওয়া গেছে পোখারা শহরের সবখানেই। শান্তিপ্রিয় না হলে কি আর কুকুরের মতো ‘ঢাল-তালোয়ারহীন’ একটি প্রাণীর হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে ঘুমানো যায়!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
টিএইচ/টিসি/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।