ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সুখের শুকতারা

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
সুখের শুকতারা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শুকতারা (সিলেট) থেকে ফিরে: প্রকৃতি এখানে তার নিজের মতো। আর তার সঙ্গে মিতালি করেছে ছোট্ট ছোট্ট কটেজ।

যেখানে মিশে আছে নিবিড় প্রকৃতির অনিন্দ্য স্বাদ। শান্ত অবারিত সুখ। সে সুখের নাম ‘শুকতারা প্রকৃতি নিবাস’।

পাহাড়ী টিলার ওপর এই শুকতারার বাস। নামের গুণের মতো রাতের চাঁদের আলো আর ভোরের স্নিগ্ধ সুন্দর সকাল এখানে। প্রজাপতি ওড়ে, পাখি গায় গান। বুনো লতাপাতায় ঘিরে থাকে শুকতারা।

সিলেট শহর থেকে প্রায় ২০ মিনিটের দূরত্বে শাহপরাণে কোলাহল থেকে দূরে যান্ত্রিকতার ছোঁয়াহীন সবুজ অরণ্যে এই শুকতারা। টিলার অরণ্যের ভাজে গড়ে তোলা হয়েছে একেকটি কটেজ।

স্থাপত্যের কৌশলে বৃক্ষরাজি ঘেরা বুনো লতাপাতায় জড়ানো কটেজটি প্রকৃতিপ্রেমীদের সুখের নীড়। সেসব নীড়ের নাম বৈচিত্র্যেও আছে বাংলা প্রকৃতির মিশেল।

টি-টেস্টার মুরাদ হোসেন ও স্থপতি জেরিন হোসেন দম্পতির গড়ে তোলা দেশের প্রথম (প্রকৃতি নিবাস) রিট্রিট এটি।

পর্যটক অতিথিতে বেশ ব্যস্ততা থাকলেও সৌন্দর্যে কোনো ভাটা নেই। মানুষকে নিসর্গ দেখানো ও প্রকৃতি নিবাসী করতে এর চেয়ে ভালো গন্তব্য নেই- এমন অনেক মন্তব্য করে গেছেন অনেকে।

কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতে শুকতারা যেন আরও সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়। ভোরের রোদ এসে তার গা মেখে দেয়। আলো আলেয়ায় এভাবে দিনরাত কাটায় শুকতারা।

বেশ কয়েকজন কূটনৈতিক অতিথি, কর্পোরেট অতিথি আর বিলাসী প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের নজর কেড়েছে শুকতারা। সেজন্য দিনে দিনে তার ব্যস্ততা বাড়ছে।

শুকতারায় একদিন রাত কাটিয়ে তার আকষর্ণ আরও বোঝা গেলো। প্রকৃতির মিশেলে নিজেকে মাতিয়ে রাখতে এখানে আসছেন অতিথিরা। সন্ধ্যার আগেই বেশ কয়েকটি গাড়ি পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠে গেলো। অতিথিরা ছুটছেন শশী, কুয়াশা আর শিরিষের দিকে।

‘স্তব্ধ অবাক নীলাম্বরে রবি শশী তারা/ গাঁথিছে হে শুভ্র কিরণমালা’- কবিগুরুর কাব্য থেকে নেওয়া একটি কটেজের নাম ‘শশী’। মান্না দে’র ‘তুমি যে শিশির-বিন্দু/মম কুমদির বক্ষে। না হেরিলে ওগো তোমারে- তমসা ঘনায় চক্ষে’- থেকে নেওয়া হয়েছে একটি কটেজের নাম ‘শিশির’।

‘কুয়াশার বুকে ভেসে আসিব একদিন এ কাঁঠাল ছায়ায়’-জীবনানন্দের এই কবিতা থেকে নিয়ে রাখা হয়েছে আরেকটি কটেজের নাম ‘কুয়াশা’।

শুকতারায় ভরে আছে বাংলাদেশ। দেশি স্থাপত্য আর দেশি পণ্যে সাজানো সব বিদ্যুৎ আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ছাড়া প্রায় সবই প্রাকৃতিক উপাদান। তাইতো সেখানে আছে কাঠের সিঁড়ি, বেতের আসবাব আর রং ছাড়া দেয়াল। পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার একটা লক্ষ্য এখানে স্পষ্ট।

টি-টেস্টার মুরাদ হোসেন জানান, ‘প্রকৃতি এখানে খুব কাছে। দূর পাহাড়ে সুদূর দৃষ্টি, সবুজ প্রকৃতি আর চা-বাগানের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যে ঘেরা ১৪ একর টিলাভূমি নিয়ে প্রকৃতি নিবাস গড়ে তোলা হয়েছে’।

‘এর স্থাপত্য আর নির্মাণশৈলী এমন, যাতে প্রকৃতির গায়ে একটুও আঁচড় পড়েনি। বিদ্যুতায়ন আর শীতাতপ ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সবই প্রকৃতিনির্ভর’- উল্লেখ করেন তিনি।
শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে শান্ত প্রকৃতির সুশীতল হাওয়ায় স্নিগ্ধতায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রস্তুত যেন শুকতারার সবুজ প্রকৃতি।

যেমন আছে শুকতারা
শুকতারা উঁচু টিলায়। তাই যেতে হলে পাহাড়ি পথ মাড়াতে হবে। অবশ্য সে পথটা প্রকৃতিময় মিশ্রণ। শুকতারার প্রৃকতি নিবাসগুলোতে উঠতে ৫০ ফুট উঁচুতে যাওয়ার জন্য রয়েছে কয়েক ধাপের সিঁড়ি। এ পথে না উঠতে চাইলে আছে শুকতারার ট্রেন। যা সোজা পৌঁছে দেবে অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে।

শুকতারার সব কটেজ তৈরি হয়েছে পাথরের ডাস্ট আর বিশেষ ইট দিয়ে। সাজানো-গোছানো অভ্যর্থনা কক্ষ আর লাউঞ্জ। পাশেই পাঠাগার।

এর ছাদের নিচে রেস্তোরাঁ। তার পাশেই সভাকক্ষ। চল্লিশজন একসঙ্গে সভা করতে পারবেন এখানে। একেবারে নিচের তলায় আছে ছোট একটি হোম থিয়েটার। এ ভবনটিতে স্থান পেয়েছে নানা ধরনের শিল্পকর্ম, চিত্রকর্ম আর আলোকচিত্র।

সভা-সেমিনার-কর্মশালা ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে টিলার চূড়ায়। আছে বারবিকিউ পার্টির জন্য চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে ছাদযুক্ত খোলা কক্ষ।

শুকতারার আতিথেয়তার আরেক নিদর্শন- এখানকার সব কাজে নিয়োজিত আছেন একদল ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মনিপুরিসহ চা-জনগোষ্ঠীর লোকবল।

শুকতারার ভাড়া
শুকতারায়  আছে বড় স্যুইট কক্ষ, সেমি স্যুইট এবং ফ্যামিলি স্যুইট কটেজ কক্ষ। যেগুলোর ভাড়া ৩ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। বিভিন্ন দিবসে ১০ শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হয়।

কেউ যেতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া শুকতারার রিট্রিট-এর ওয়েবসাইট www.shuktararesort.com ঘুরে আসতে পারেন। যেখানে দেওয়া আছে তার সবকিছুর বর্ণনা ।

যাতায়াত ব্যবস্থা
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে রিসোর্টটির অবস্থান। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের ওই রিসোর্টে যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমে গাড়ি বা অটোরিকশাযোগে যেতে সময় লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট।

সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ধরে হযরত শাহপরাণ মাজার গেটের একটু সামনে চৌমুহনীতে বাঁদিকে খাদিম জাতীয় উদ্যানের রাস্তা ধরে হাঁটলেই পাওয়া যাবে ‘শুকতারা প্রকৃতি নিবাস’।

বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।