ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দিঘির ভেতরে পুকুর!

আরিফ সাওন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
দিঘির ভেতরে পুকুর! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর থেকে ফিরে: ৩৬০ বিঘা জমিতে একটি দিঘি। আর সেই দিঘির ভেতরেই একটি পুকুর! দিঘিটির মতোই ভেতরের পুকুরটিও মানুষেরই খনন করা।



দিঘির ভেতরের পুকুরটি রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামের পাথরাইল আউলিয়া জামে মসজিদের পাশে। এর চারপাশে রয়েছে জনবসতি। দিঘির পাড়ে জনবসতি গড়ে ওঠায় গ্রামটির নামকরণও করা হয়েছে ‘দিঘিরপাড়’।

মসজিদ নির্মাণ বা দিঘি খনন কখন করা হয়, তা স্থানীয়রা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। কেউ বলেন ছয়শ’, সাতশ’, কেউ বলেন আটশ’ বছর আগে।

undefined


তবে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১৩৯৩ থেকে ১৪১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। পানির সংকট নিরসনের জন্য ৩২.১৫ একর জমিতে দিঘিটিও খনন করেন তিনি। তবে স্থানীয়দের মতে, পুরো জায়গাটার আয়তন ৩৬০ বিঘা। লোকমুখেও দিঘির আয়তন ৩৬০ বিঘা বলে প্রচার রয়েছে। যার বেশিরভাগই দখল হয়ে গেছে।

মসজিদের পাশে এবং দিঘির পাড়ে রয়েছে হযরত মজলিশ আব্দুল্লা খান আউলিয়ার মাজার। মাজারের সামনে বসে থাকা দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা জলিল মাতুব্বর বলেন, ‘শুনেছি, বাংলাদেশে ধর্মপ্রচারে আসা বার আউলিয়ার মধ্যে আব্দুল্লা খান আউলিয়া একজন। ওই সময়ই তিনি এখানে মসজিদ নির্মাণ ও ৩৬০ বিঘা জমিতে দিঘি খনন করেন’।

undefined


কখন মসজিদ নির্মাণ বা দিঘি খনন করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও হযরত খানজাহান আলী (রহ.) এর সময়ের সঙ্গে কিছু আলামতের মিল দেখা যায়। বাগেরহাটে ষাট গম্বুজ মসজিদ জাদুঘরের পাশে সেই সময়কার যে পাথর ও বড় আজিনায় যে ইট-সুঁড়কি আর কাঁঠাল গাছ রয়েছে, সেই একই ধরনের পাথর, ইট-সুঁড়কি ও কাঁঠাল গাছ এ মসজিদের পাশেও রয়েছে।

৩৬০ বিঘার দিঘিটি কোথায় জানতে চাইলে জলিল মাতুব্বর বলেন, ‘এইতো আপনি দিঘির পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার সামনেই তো দিঘি’।
 

undefined


তার কথা শুনে যে কেউই অবাক হবেন। কারণ, দিঘি তো এমন হতে পারে না। দিঘি বলতে তো অনেক বড় জলাশয়কে বোঝায়। দিঘিতে তো থাকবে পানি, জলজ উদ্ভিদ আর জলজ প্রাণী। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি যেটাকে দিঘি বলছেন, সেখানে মাঠ আর সবুজ ঘাস। মাঠের শুকনো জায়গায় মাড়াই করার জন্য চাষিরা কাটা ধান রাখছেন। মাঠে দাঁড়িয়ে আছে শুকাতে দেওয়া পাটকাঠি।

আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে, কচুরিপানায় ভরা গভীর খাল। খালের কিছু জায়গা পরিষ্কার করে ঘাট বসানো হয়েছে। পাড়ের গৃহিণীরা দৈনন্দিন কাজে এ ঘাটটি ব্যবহার করেন। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে, ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। তাহলে এটা কিভাবে দিঘি হতে পারে!

undefined


সবুজ ঘাসের সেই মাঠের ভেতর দিয়ে হেঁটে সামনে গিয়ে দেখা যায়- একটি পুকুর, অনেক বড় পুকুর সেটি। পুকুরের চারপাশে লাগানো কলাগাছের পাতা বাতাসে দোল খাচ্ছে। অনেকে গোসল করছেন এ পুকুরে। এক জায়গায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ঘাট করা হয়েছে। কিন্তু সবাই যে যার মতো একেক জায়গা থেকে নেমে গোসল করেন। তবে গোসল শেষে উঠে আসেন গাছের গুঁড়ি বেয়ে। গ্রামের মানুষের গোসলের জন্য হয়তো এটাই ভরসা। তবে কেউ এ পুকুরের পানি পান করেন না।

পুকুরের কাছ পাথরাইল মসজিদের কাছে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। তারা নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে গাছের নিচে বসে গল্প করছিলেন। সব জটিলতার অবসান ঘটান তারাই।

undefined


তাদের মধ্যে আব্দুল মান্নান মিয়া (৭৫) সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে এক আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘এই ভরাট জায়গাটাই দিঘি। কচুরিপানার খালটাই দিঘি। কৃষকের মাঠটাই দিঘি। পাড়ে কলাগাছ লাগানো পুকুরটাও দিঘি। যেটা দেখে দিঘি মনে হচ্ছে না। এ পুরো জায়গাটাই এক সময় দিঘি ছিল। ছোটবেলায় এ দিঘির অল্প পানিতে গোসল করেছি। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়’।

আব্দুল জব্বার মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ভরাট হয়ে যাওয়া দিঘির ভেতরে একটি বড় পুকুর খনন করা হয়। যেখানে গোসল করতে দেখছেন, ওটাই সেই পুকুর। এ পুকুরেই দিঘিরপাড়ের বাসিন্দারা গোসল করেন। পুকুরে মাছের চাষও করা হয়’।

দিঘিরপাড় মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ আবুল বাশার বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বহু পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থী আসেন এখানে। কিন্তু দিঘি নিয়ে কারো মধ্যে কোনো কৌতুহল দেখা যায় না। মসজিদের প্রতিই সবার আগ্রহ বেশি’।

undefined


বাগেরহাটে একটি কথা বেশ প্রচলিত ‘নদী মরে গেলেও থাকে তার ৠাত (চিহ্ন)’। ঠিক তেমনি দিঘিটি ভরাট হলেও তার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে।

যেভাবে যাওয়া যাবে
ঢাকা থেকে বাসে মাওয়া ঘাট হয়ে পুলিয়া বাজার নেমে দিঘিরপাড় গ্রামে যাওয়া যায়। অথবা ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় থেকে মাওয়া ঘাটের দিকে যাওয়ার রাস্তায় পুলিয়া বাজারে নেমে ভ্যানে যেতে হবে। এছাড়া নিজস্ব মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারেও যাওয়া যাবে।

আরিফ সাওন: বাংলানিউজের পাঠক

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।