প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে ঘুমঘোরে বৃষ্টিস্নানের স্বপ্ন দেখেছিলাম। দুর্ভিক্ষ পীড়িত আকাশে মেঘের আকাল হতে পারে, কিন্তু এটুকু আশা ছিলো পথে নামলেই জলভরা আকাশটা থেকে মেঘের হাত ধরে নেমে আসবে শান্তির জলধারা।

undefined
হলো তার উল্টো। পথে নামার আগেই দিগন্ত কালো করে এসে গেলো বর্ষা মেঘের দল। দু’দিন টানা চলছে অবিশ্রাম জল পতন। খবর পেলাম সিলেটে বন্যা হওয়ার উপক্রম। যেই ভাবা সেই কাজ। হুট হুট পরিকল্পনা, জুয়েল থিওটোনিয়াসের এসএমএসের কল্যাণে সাড়া পাওয়া গেলো ফাটাফাটি। এবারের দল বেশ ভারী, শেষতক দশজনে গিয়ে ঠেকলো।

undefined
এ গল্প একেবারেই মেঘ, পাহাড় আর জলের সঙ্গে মিতালির। কাকডাকা ভোরে পুরো সিলেট ঘুমিয়ে থাকলেও কদমতলী বাসস্ট্যান্ড জেগে উঠলো আমাদের হাঁকডাকে। সেখান থেকে এক দৌড়ে ক্বিন ব্রিজ পার হয়ে জিন্দা বাজার। সেখানে আছে এক খাবার ঘর। পাঁচ ভাই তার নাম। মনে হয় জন্ম জন্মান্তর ধরে সেখানে খেয়েই চলেছি। গরুর মাংস আর চালের আটার রুটির স্বাদ মুখে লেগে আছে।

undefined
সকালের নাস্তার পর চলে এলো ভাড়ার লেগুনা। জানলাম সারাদিন সে আমাদের জন্যই উৎসর্গকৃত। চলেছি হাদারপারের দিকে। প্রকৃতির কোলে সেখানে আমরা হাঁদারাম সাজবো। পথে ১০১টা রূপের বাহারে চোখ ধাঁধিয়ে দিলো বর্ষার রূপসী সিলেট।

undefined
শহর থেকে বের হলে চা বাগান, লাল মাটির পথ। টিলার সারি সঙ্গে চলবে বেশ কিছুক্ষণ। মাঝে এবড়োথেবড়ো পথ কষ্ট দিলেও গোয়াইনঘাটের সীমানা পার হলেই একে একে দৃশ্যপটে হাজির হবে সারি নদী, দিগন্তের পটভূমিতে ধোঁয়াটে পাহাড়ের সারি আর হাওরের ছোট ভাই ডুবন্ত বিল।

undefined
এর মধ্যেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরিণত হলো মুষলধারে। চিন্তা করুন, চারপাশে দিগন্ত অবধি পানির সমুদ্র আর মাঝখান দিয়ে বাঁধানো পথ চলে গেছে সোজা গন্তব্যে। বর্ষায় গেলে হাদারপার অবধি এমনই সব দৃশ্যকল্পের কোলাজ।

undefined
এ অভিযানে সব রেডিমেট পেয়ে যাচ্ছি। বন্ধু সুহৃদ ছড়িয়ে আছে সারা দেশজুড়ে। বিনয় ভদ্রের ব্যবস্থায় এ পর্যন্ত এসেছি লেগুনায়। এবার তার তরিকা মেনে পেয়ে গেলাম নৌকাও। সঙ্গে আছে আবার ফাহিম। সে এর আগে ছয়বার এখানে এসেছে। রীতিমতো বিছানাকান্দি পানতুমাই বিশেষজ্ঞ।

undefined
নৌকা ঘাট থেকে ছাড়লো, বাড়লো বৃষ্টির দমকাও। সেই শুরু, একটানা আমরা ভিজেছি পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টা। বর্ষার শুরুতে এ কোন ঘোর লাগা বর্ষণের আবহ? বিছনাকান্দি,পানতুমাই সম্পর্কে জানতাম,

undefined
কিন্তু কুলুমছড়ার নাম শুনিনি। মাঝির কাছে জানলাম সে দিকেই চলেছি। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দিগন্তের বর্ষাধোয়া পাহাড়ে চোখ রাখতেই দেখা গেলো একটি সাদা রেখা নেমে গেছে পাহাড়ের শীর্ষ থেকে নীচে।

undefined
নৌকা যত এগোচ্ছিলো বাড়ছিলো সে রেখার প্রশস্ততা। দৃষ্টিসীমায় এলে বোঝা গেলো এ নিছকই ঝরনা না, একে জলজ্যান্ত জলপ্রপাত না বললে কম বলা হবে। আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের পটভূমিতে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত রেখায় এক ছোট্ট গ্রাম। পাহাড় থেকে নেমে কুলুম ছড়া এসেছে এখানে। সীমান্ত রেখার ওপারে বলে ছড়ার কাছাকাছি যাওয়া উচিত হবে না জেনেও এর গর্জন আর স্রোত রাশি চুম্বুকের মতো টেনে নিয়ে গেলো ওপারে, ভারতবর্ষের সীমানায়।

undefined
বজ্রের শক্তির কথা জানি, প্রথম দেখলাম জলরাশির শক্তি। পাহাড় ধোয়া লক্ষ কিউবেক মিটার পানি গড়িয়ে নামছে এ পারে। কুলুম ছড়ার এমনই রূপ। অবশ্য শর্ত একটাই আসতে হবে ভরা বর্ষায়। স্থানীয়রা বারবার তাড়া দিচ্ছিলো, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী না টের পেয়ে যায়। অগত্যা কুলুমছড়ার মায়া কাটাতে হলো।
চলবে...
মনোযোগ
সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে হাদারপার যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। সারা দিনের জন্য ভাড়া করলে খরচ পড়বে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা। তবে দলে ভারী হলে সারা দিনের জন্য লেগুনা ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ। খরচ পড়বে ২২শ থেকে ২৫শ টাকা। হাদার পাড় থেকে বিছানাকান্দি যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে। দিন ভেদে ভাড়াও কম বেশি করে। তবে উচিত হবে কুলুম ছড়া, লক্ষ্মণ ছড়া ,পানতুমাই এবং বিছানাকান্দির যাওয়ার জন্য একেবারে দিন চুক্তিতে নৌকা ভাড়া করা। খরচ ২২শ থেকে ২৫শ’র মতো। বর্ষায় এখানকার সৌন্দর্য ভুবন ভোলানো। তবে এ মৌসুমে গেলে যারা সাঁতার জানেন না তারা অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এএ