ইতিহাস, ঐতিহ্য মানুষকে টানে সবসময়। পুরনোর মধ্যে খুঁজে পেতে চায় নতুন কিছু।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের প্রতিষ্ঠাতা প্রাচীন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী হিসেবে এ শহরের অনেক নাম। রয়েছে পর্যটনের জন্য খ্যাতিও।
তবে পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করবে তিনতলা বিশিষ্ট ‘হাজার দুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম’। ইতালীয় স্থাপত্যকলার এক অনুপম জীবন্ত নিদর্শন এটি।

undefined
প্রতিটি কক্ষের কারুকার্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে’ রয়েছে অস্ত্রাগার, অফিস, কাছারি, রেকর্ডরুম। অস্ত্রাগারে প্রায় ২ হাজার ৬০০ অস্ত্র সজ্জিত রয়েছে বলে জানা যায়।
এগুলো পলাশীযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো বলে প্রচলিত রয়েছে। এখানে যেমন সংরক্ষিত রয়েছে নবাব আলীবর্দীর ব্যবহৃত তলোয়ার, বহুনল বিশিষ্ট বন্দুক তেমনি রয়েছে নাদির শাহ বা মীর কাশেমের ছোরা, অস্ত্র ও বিভিন্ন আকারের কামান।

undefined
দুই ও তিনতলায় রয়েছে ‘আর্ট গ্যালারি ও লাইব্রেরি’। আর্ট গ্যালারিতে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা।
এর মধ্যে- ‘the burial of sir John More, Adom & Eve. Black Bent’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

undefined
লাইব্রেরি কক্ষে ছোট বড় আকারের অসংখ্য চুক্তিপত্র, নাটক, নভেল, তাম্রলিপি, দলিল-দস্তাবেজ, ইতিহাসসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বইপত্র রয়েছে।
আইন-ই-আকবরী (আবুল ফজল) ও হারুন-উর-রশীদের হস্তলিখিত কোরান শরীফ এখানে সংরক্ষিত আছে।

undefined
২০ কেজি ওজনের তিন হাত বাই দুই হাত আকৃতির সুবিশাল অ্যালবামটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য।
সমগ্র কেল্লা কম্পাউন্ডের আয়তন ৪১ একর। এই হাজার দুয়ারী প্যালেসটির সম্মুখভাগের দু’পাশে রয়েছে মনোরম ফুলের বাগান।

undefined
একতলা প্যালেসের সম্মুখভাগের সিঁড়িটি ‘দরবার কক্ষ’ পর্যন্ত উঠেছে। হাজার দুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম’ প্রাসাদটি শুক্রবার বন্ধ থাকে। প্রবেশ মূল্য দশ রুপি।

undefined
হাজার দুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম’ প্রাসাদটির বিপরীত দিকে ‘ইমাম বাড়া’ অবস্থিত। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মহরমের প্রথম দশদিন এ সুরম্য ভবন জনসাধারণের প্রবেশের জন্য খোলা থাকে।
এ সময় এখানে মেলাও বসে। বর্তমানে দু’টি স্থাপত্য ভারত সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

undefined
এছাড়া সেখানে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এরমধ্যে কাঠগোলা বাগান, নশীপুর রাজবাটি, আজিমুন্নেসা সমাধি, ইংরেজ সমাধি, ডাচ সমাধি, জগৎশেঠের বাড়ি, সিরাজের প্রাসাদ হিরাঝিল, মতিঝিল, কাটরা/চক মসজিদ, রানী ভবানী মন্দির উল্লেখযোগ্য।

undefined
একটু দূরেই কালের সাক্ষী হিসেবে রয়েছে পলাশীর প্রান্তর ও আম বাগান। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্থাপনা ঐতিহ্যবাহী ‘টমটম’ (ঘোড়ার গাড়ি)-এ চড়ে অবলোকন করা যাবে।

undefined
যেভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে লালগোলা ট্রেনে মুর্শিদাবাদে আসা যায়। যারা উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেনে যাবেন তাদের আজমীরগঞ্জ স্টেশনে নেমে ভাগিরতী নদী পার হয়ে টমটম অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মুর্শিদাবাদে যেতে হবে।

undefined
এছাড়া বাসেও আসা যায়। বাসে এলে বহরমপুরে নেমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মুর্শিদাবাদে আসতে হবে।
৩০০ থেকে ৪০০ রুপিতে টমটম অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করা যায়। এতে অল্প সময়েই মুর্শিদাবাদের সব ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-

undefined
বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫