ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

চীনের মহাপ্রাচীর: এখনো মানুষের বিস্ময়

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
চীনের মহাপ্রাচীর: এখনো মানুষের বিস্ময়

বেইজিং থেকে ফিরে: চীনের মহাপ্রাচীর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কেননা মানুষের হাতে নির্মিত এটিই পৃথিবীর সব থেকে বড় স্থাপত্য।

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো চীনের এ মহাপ্রাচীর।

ডিসেম্বরে বেইজিংয়ে কনকনে শীত পড়ে। রাতে কখনো কখনো তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৫ ডিগ্রিতে। আর দিনে তাপমাত্রা থাকে ১ থেকে ৫ ডিগ্রিতে। এ তীব্র শীতের মধ্যে আমরা দেখতে গেলাম চীনের মহাপ্রাচীর।

ঢাকার চীনা দূতাবাসের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে বেইজিং সফরে গিয়েছিলাম। প্রতিনিধিদলের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল এ মহাপ্রাচীর পরিদর্শন। চীনে আগেও আমি একবার গেছি। তবে সেই সময় মহাপ্রাচীর দেখতে পারিনি। এবার মহাপ্রাচীর দেখার সৌভাগ্য হলো।

বেইজিং থেকে মহাপ্রাচীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়। আমাদের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাওয়া হলো জুয়ংগুয়ান গ্রেট ওয়াল সাইটে। বেইজিং থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এ অংশটির অবস্থান। সকালে আমাদের অন্য কর্মসূচি থাকার কারণে এখানে পৌঁছালাম দুপুরের পর।  

গ্রেটওয়াল বা মহাপ্রাচীরে প্রবেশ করতে হলে টিকিট প্রয়োজন হয়। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য সেই টিকিটের ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিলেন। আমাদের গাইড সময়ও বেঁধে দিলেন। আড়াই ঘণ্টা পরেই নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে হবে। সেই অনুযায়ী আমরা দল বেঁধে প্রাচীরে ওঠা শুরু করলাম।

পাথরের সিঁড়ি বেয়ে যতই ওপরে উঠছি, ততই বিস্ময়। আড়াই হাজার বছর আগে চীনের সেই সময়ের শাসকরা শত্রুর হাত থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে এ প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু করেন। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে এ প্রাচীর নির্মাণ কার্যক্রম চলে। দীর্ঘ সময়ে নির্মিত হয় ২১ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রাচীর। আর সেই প্রাচীর এখন বিশ্বের বিস্ময়।

তীব্র শীতের মধ্যে পাথরের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছি। প্রাচীরের দুপাশে পাহাড় আর জঙ্গল। কিছু দূর সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই দেখা মেলে চৌকি। এসব চৌকি অনেকটা দুর্গের মতো। এখান থেকে প্রহরীরা সীমান্ত পাহারা দিত। এক চৌকি পেরিয়ে দ্বিতীয় চৌকিতে গেলাম। মাঝখানে আরও খাড়া সিঁড়ি পেরোতে হলো। একেতো তীব্র শীত, তারপর এ খাড়া সিঁড়ি। হাঁপিয়ে উঠছি। তবে প্রাচীরের ওপরে উঠে অনেক দূরের পাহাড়, বন-জঙ্গল দেখতে পেলাম। প্রাচীরও অনেকটা আঁকাবাঁকাভাবে উঠে গেছে। আবার অন্য পাশ থেকে নেমে গেছে।

ডিসেম্বরে তীব্র শীত উপেক্ষা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসেছেন মহাপ্রাচীর দেখতে। পর্যটকের কমতি নেই। তবে জানতে পারলাম গ্রীষ্ম আর বসন্তে সারা বিশ্ব থেকে আরও বেশি পর্যটক আসেন এ প্রাচীর দেখতে। এক সময় ওপর থেকে নামতে শুরু করলাম। উঠতে যতটা কষ্ট হলো, নামতে তেমন কষ্ট হলো না। নিচে প্রবেশ পথের পাশেই গ্রেটওয়াল মিউজিয়াম। মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখলাম। সেখানে দেখলাম প্রাচীর নির্মাণের ইতিহাস ডিজিটাল স্ক্রিনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যেই সময় শেষ। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাদের ফিরতে হবে। মহাপ্রাচীরকে বিদায় জানিয়ে আমরা বাসে উঠে পড়লাম।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
টিআর/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।