ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

বছরব্যাপী রাশিয়ার আলোচিত যতো ঘটনা 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২০
বছরব্যাপী রাশিয়ার আলোচিত যতো ঘটনা 

ঢাকা: চিরকালের জন্য বিদায় নিচ্ছে ২০১৯। বছর জুড়ে আলোচিত অনেক ঘটনার জন্ম দেওয়া বছরটি নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে। 

এ বছর অস্ত্র, অস্ত্রচুক্তি, প্রযুক্তি, যুদ্ধ ও খেলার অঙ্গন নিয়ে বিশ্বব্যাপী বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া।  

এসব ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নতুন করে বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধি করছে রাশিয়া।

 ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে নতুন এক উত্থানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশটি। সেই অগ্রযাত্রায় ২০১৯ ছিল রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর।

পাঠক, চলুন এক ঝলকে ফিরে দেখা যাক কেমন কাটলো বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার ২০১৯।  


এস-৪০০

এ বছর রাশিয়ার একটিমাত্র অস্ত্র- ‘এস-৪০০’ মিসাইল সিস্টেম বিশ্ব রাজনীতিতে রীতিমত পালাবদল ঘটিয়ে দিয়েছে। অত্যাধুনি প্রযুক্তির এ মিসাইল সিস্টেম কেনা ও তাতে বাধ সাধা নিয়ে বিশ্ব বলা চলে দুই ভাগে হয়ে গেছে।    

রাশিয়ার এ মিসাইল সিস্টেম কিনতে চায়- তুরস্ক, চীন, সৌদি আরব, ভারত, কাতারসহ আরও বেশ কিছু দেশ। অন্যদিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ মিসাইল সিস্টেমকে হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। যারা এ মিসাইল সিস্টেম কিনবে তাদের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির হুমকি দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলো।  

এস-৪০০ স্বল্প থেকে শুরু করে দীর্ঘ যে কোনো রেঞ্জে ব্যবহার করা যায়। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর কাছে এ ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো মিসাইল সিস্টেম নেই। ফলে তারা এ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।

এদিকে ন্যাটোভুক্ত দেশ হলেও, আমেরিকা ও ন্যাটোর অন্য দেশগুলোর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এরই মাঝে এস-৪০০ মিসাইল কিনে ফেলেছে তুরস্ক। এ নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে ট্রাম্প ও অন্য বিরোধীদের সম্পর্ক শীতল হয়ে উঠেছে। বাকি দেশগুলোও এস-৪০০ কিনবে কিনবে করছে।

সব মিলিয়ে আগামীতেও বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়ার এস-৪০০ ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   

রুশ-মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি বাতিল

এ বছরই স্নায়ুযুদ্ধকালে রুশ-মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা। ১৯৮৭ সালে আইএনএফ নামে রুশ-মার্কিন এ পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর আওতায় ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও মহড়া নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এ চুক্তি বাতিল হওয়ায় নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মাঝে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে। ট্রাম্প ও পুতিন উভয়ই আরও উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরির হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন। পরাশক্তিধর এ দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বিশ্বকে নতুন করে অস্থির করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

শ্যুটিংয়ে ভ্লাদিমির পুতিন।  ছবি- সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ছে রুশ প্রভাব

গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ বছর সৌদি আরব সফর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে নতুন করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে মস্কোর প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছে বলে কূটনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।  

ফুটবল-অলিম্পিকসহ সব ধরনের আসরে নিষিদ্ধ রাশিয়া

এ বছরের ডিসেম্বরেই ডোপ কেলেঙ্কারির জন্য ফুটবল-অলিম্পিকসহ সব ধরনের আসরে চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে রাশিয়া। দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং অ্যাজেন্সির (ডব্লিউএডিএ) কার্যনির্বাহী সভা এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে আসন্ন ২০২২ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না রাশিয়া।  

যদিও এ ব্যপারে আপিল করার সুযোগ রয়েছে রাশিয়ার। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়া যায় না, এবং এটি এক ধরনের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন।  

রকেট পরীক্ষাকালে ৫ জনের রহস্যজনক মৃত্যু 

এ বছরের আগস্টেই আর্চেঞ্জেলস্ক শহরের একটি সামরিক স্থাপনায় রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ ব্যক্তি নিহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।  

ওই সামরিক কেন্দ্রটিতে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রসহ রাশিয়ার বিরোধী পক্ষের দাবি মস্কো সেখানে খুবই বিপজ্জনক কোনো কিছুর পরীক্ষা চালিয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ইউরোপ ও আমেরিকা।  

বিশ্বের প্রথম ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু

আগস্টে বৃহত্তর পর্যায়ে বিশ্বের প্রথম ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে রাশিয়া। দেশটির উত্তর মেরু ঘেঁষা বন্দর মুরমান্সক থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে  বন্দর চুকোতকার উদ্দেশ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র যাত্রা করে।  

৪৫৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯৮ ফুট প্রস্থের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুনামি মোকাবিলায় সক্ষম। এ ছাড়া এতে রয়েছে বরফ কাটার বিশেষ ব্যবস্থা। এটি আগামী ৪০ বছর সক্রিয় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি রাশিয়ার উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে।  

মহাকাশকেন্দ্রে প্রথম ‘আধা-মানব’ রোবট প্রেরণ 

এ বছরের আগস্টেই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে (আইএসএস) ‘ফেদর’ নামে পূর্ণ আকৃতির ‘আধা-মানব’ (Humanoid) রোবট পাঠায় রাশিয়া। মহাকাশকেন্দ্রে ১০ দিন অবস্থান করে নভোচারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে ওই হিউম্যানয়েড। এর মধ্য দিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনায় দক্ষ উন্নত প্রযুক্তির রোবট তৈরিতে ঈর্ষণীয় মাত্রায় এগিয়ে যায় রাশিয়া।  

এসবের বাইরে ২০১৯ সালে পরমাণু শক্তিচালিত আইসব্রেকার উদ্বোধন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম-জং-উনের রাশিয়া সফর, রুশ-ইউক্রেন সংকট নিয়ে  ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে পুতিনের বৈঠক, সিরিয়ায় রাশিয়া-তুরস্ক-ইরান জোট, রাশিয়া-চীন-ইরান সামরিক মহড়াসহ মস্কোর নানা পদক্ষেপ বছরব্যাপী আলোচনায় ছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ 
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।