ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাবে আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২২
জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাবে আ.লীগ

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের তৃলমূলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে আরও সুসংহত করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ বছর থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করবে। চলতি বছরের মধ্যেই দল গোছানোর কাজ সম্পন্ন করে দলকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বানকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে উঠতে মাঠে নামছে দলটি।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সংকট তৈরি হয় যা সংগঠনের ওপর প্রভাব পড়বে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন। দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে অনেক জায়াগায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর পেছনে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা এমনকি এমপি, মন্ত্রীরাও রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্তির কারণে বিভিন্নস্থানে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং প্রার্থীসহ অনেকে হতাহত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সব ঘটনা দলের শৃঙ্খলা ও ঐক্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আগে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে দলের ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করাকে জরুরি মনে করছেন তারা। অভিযুক্তদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া আর যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোও অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান।

সর্বস্তরের সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তিন বছর অন্তর সম্মেলনের সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সম্মেলনের আগে মাত্র তিনটি জেলা সম্মেলন হয়। তখন অধিকাংশ জেলারই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এর পর ২০২০ সালের শুরুতে সব পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শুরু করলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দুই বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম অধিকাংশ সময়ই বন্ধ এবং কখনও সীমিত পরিসরে চলে। যার ফলে সম্মেলন কার্যক্রম পুরোপুরি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যেও কয়েকটি জেলা-উপজেলাপসহ তৃণমূল পর্যায়ে কিছু সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলা সম্মেলনই বাকি রয়েছে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে ৬৫০টি। এর মধ্যে ৪৫০টির কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির মধ্যে কোনো কোনোটির ৮, ১০ বছর বা এক যুগও পার হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ রয়েছে। তবে ডিসেম্বরেই পরবর্তী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে দলের নেতারা জানান। এই সময়ের আগেই তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের উপজেলা, জেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করা হবে। দ্রুতই এ কার্যক্রম শুরু হবে বলেও ওই নেতারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের মধ্যেই তৃলমূল পর্যায় থেকে দল গোছানো, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করা হবে। যেসব জায়াগায় নেতাকর্মীর মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে, দ্বিমত, দ্বিধা-বিভক্তি আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হবে। মত পার্থক্য, বিরোধ মিটিয়ে দলীয় শৃঙ্খলাকে আরও সুসংহত করা হবে। করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেসব জায়াগায় সম্মেলনগুলো জাতীয় সম্মেলনের আগেই শেষ করা হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে থাকে সে জন্য এ সব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করা এবং মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করে নির্বাচনে বিজয়কে নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তৃলমূল থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দলের শৃঙ্খলার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন দ্রুত শেষ করা হবে। এ বছরের মধ্যেই ঘাটতিগুলো দূর করে দলকে আরও শক্তিশালী করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২২
এসকে/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।