ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এবার ইউপিতে দৃষ্টি ইসির

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
এবার ইউপিতে দৃষ্টি ইসির

ঢাকা: সারাদেশের ২৩৪ পৌরসভায় ‘সফল’ নির্বাচনের পর এবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ছক কষছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকার আইনে সংশোধনী আনায় এ নির্বাচনটিও দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।


 
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলানিউজকে তারা বলেছেন, বিগত দু’বছরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এবারের পৌরসভা নির্বাচন সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ‘সফল’ এ পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এবার তারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছর সারাদেশের প্রায় সাড়ে হাজার ইউপি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। এরমধ্যে মার্চে অনুষ্ঠিত হবে ২১ উপজেলার দুই শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সে প্রস্তুতিই এখন নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই সংশোধনী আইনের আলোকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রথম দফায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে মার্চের শেষ দিকে ভোটগ্রহণে যেতে পারে ইসি।

সর্বশেষ ইউপি নির্বাচন হয়েছিলো ২০১১ সালে। সে বছর ২৯ মার্চ শুরু হয়ে কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন শেষ হয়েছিল ৫ জুলাই।
 
প্রথম দফায় ২৯ মার্চ নির্বাচন হয়েছিল বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুর, গৌরনদী, পটুয়াখালীর বাউফল, পিরোজপুর, বরগুনার পাথরঘাটা, বামনা, ভোলা সদর, দৌলতখান, ঝালকাঠীর রাজাপুর, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, খুলনার বটিয়াঘাটা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, বাগেরহাটের রামপাল, মংলা ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার (মোট ২১) দুই শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে।
 
ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ২৯(৩) ধারা অনুযায়ী, পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন, ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সে হিসাবে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চের আগের ১৮০ দিনের মধ্যেই ওই ২১ উপকূলীয় উপজেলার ইউপিগুলোর নির্বাচন করতে হবে।
 
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, আইন অনুযায়ী গত ২ অক্টোবরই ২১ উপজেলার ইউপিগুলোতে নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউপির তালিকা পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যেসব ইউপির মেয়াদ ২৯ মার্চ থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ণ হবে, সেগুলোর নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে তালিকায়। সেক্ষেত্রে ২১ উপজেলার ইউপিগুলো সর্বাগ্রে থাকবে।
 
এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাড়ে চার হাজার ইউপির তালিকা পাঠিয়েছে। এসবের মধ্যে যেগুলোর মেয়াদ যখন শেষ হবে, সেগুলোর নির্বাচন সে অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
 
নির্বাচনে ২০১৫ সালের নতুন ভোটাররাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এবারের পৌর নির্বাচন তাদের উৎসাহের জায়গা। কারণ, অতীত ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ও তারপর আয়োজিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েও বর্জন করেছে দেশের অন্যতম বড় দলটি। দশম সংসদ নির্বাচন ও চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতাও হয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি। সেসব বিবেচনায় এবারের পৌরসভা নির্বাচন, দীর্ঘ সাত বছর পর ‘সত্যিকারের’ প্রথাগত নির্বাচনী আমেজ পেয়েছে। এতে দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ হওয়ায় ভোটারদের উৎসাহ ছিলো বেশি। দেশব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। যেখানে আগের নির্বাচনগুলোতে এতো ভোটারের উপস্থিতি ছিলো না।
 
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার দেওয়া তথ্যমতে, এবারের পৌর নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ৭৪ শতাংশ। যা বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসির সব নির্বাচনের চেয়ে বেশি। তাছাড়া, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারি দলও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যার ফলে সংস্থার নিরপেক্ষতা প্রমাণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও।
 
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অন্য নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার সহিংসতাও কম ছিল। এর কারণ ইসির কঠোর অবস্থান। কারণ, এবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ চাপে রেখেছিল ইসি। এছাড়া, ফোর্স ছিল প্রায় সোয়া লাখ। আবার বিভিন্ন দলের সন্দেহভাজন বিশৃঙ্খলাকারীসহ জঙ্গি সংগঠনের সন্ত্রাসীদের ধরতেও ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। আবার প্রথমবারের মতো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইসি ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে মন্ত্রী-এমপিরাও চাপে ছিলেন। তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।

এ সবকিছু মিলিয়েই এবারের পৌরসভা নির্বাচন ‘সফল’ এবং ইউপি নির্বাচন আয়োজনের ‘উৎসাহের জায়গা’ বলে উল্লেখ করছেন কর্মকর্তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
ইইউডি/এইচএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।