ঢাকা: বিভ্রান্ত না হয়ে জনগণকে নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ… জনগণ কোনো রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে… নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগণের আদালত। যারা জনগণের আদালতের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
‘গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান, আপনারা ধৈর্য হারাবেন না, নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করবে সেই বিশ্বাস রাখুন। ’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না, বরং সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদের জনগণের আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
‘কোনো হঠাকারী সিদ্ধান্ত নয়’
তারেক রহমান বলেন, আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
‘মনে রাখা দরকার, লোক বা লাভের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ করে ছাত্র-তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম। ’
‘সংস্কার কর্মসূচি প্রসঙ্গে’
তারেক রহমান বলেন, কোন কোন মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব মানুষ, সব রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কূটতর্ক বলেই বিবেচনা করে। বরং আমাদের দল বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগের যে সুযোগটি পায় যেটি রাষ্ট্র-জনগণের রাজনীতির ক্ষমতা নিশ্চিত করে। ’
‘বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই টেকসই হয় না। অন্তর্বর্তী সরকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে… সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্য দুদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ হয়তো ক্ষোভ সরকারের সংস্কার দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আনতে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে দায়ের করা লাখ লাখ মামলায় এখনো প্রতিদিন মানুষকে আদালতের বারান্দায় ছোটোছুটি করতে হচ্ছে।
‘দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপি বারবার যে কথাটির ওপরে জোর দিতে চায় সেটি হলো অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার কিংবা গৃহীত পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে চাইলে ষড়যন্ত্রকারীর ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিবার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছে। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা দেশে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি দেখতে চায় না। এই কারণে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের প্রতি অব্যাহত রেখেছে।
‘গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে বিএনপি স্বাগত জানায়’
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকার প্রচলিত বিধি ব্যবস্থা সংস্কার করে আরও উন্নত বিধি ব্যবস্থার পক্ষে ছাত্র-তরুণরা অবস্থান নেবে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে… দেশের তরুণ জনশক্তি ভূমিকা রাখতে এটাই স্বাভাবিক তারুণ্যে ধর্ম।
‘দেশে প্রয়োজনে আরও নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে এটাই গণতান্ত্রিক রীতি… এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব পরিস্থিতিতে সব সময়ে বহু দল ও মতের চর্চার পক্ষে। ’
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সভা হয়।
মিলনায়তন ছাড়াও ইনস্টিটিউশনের বাইরেও প্যান্ডেল টানানো হয় এবং বড় পর্দার স্ক্রিন স্থাপন করা হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
‘ছাত্রদলকে লেখাপড়া করতে হবে’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হতে হবে লেখাপড়া এবং লেখাপড়া। লেখাপড়ার পাশাপাশি তোমরা নিজেদের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের সাথে সস্পৃক্ত রাখো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেকে একজন আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হও।
‘শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা জরুরি আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ। সুতরাং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করা না গেলে নিশ্চিতভাবে হয়তো আবারও পথ হারাবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
টিএ/এএটি