সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশের খুঁটি দিয়ে হাট-বাজার ভবনের ছাদ ঢালাই করার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার মীর সেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভবনটি নির্মাণ করতে দুই দফায় নোটিশ দেওয়া হলেও তোয়াক্কা করেননি ঠিকাদার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘গ্রামীণ হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সমেশপুর দোতলা হাট ভবন নির্মাণ কাজে এসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ঠিকাদার বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি পরপর দুই দফায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. রোকন উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভবনের ছাদ ঢালাইয়ে এমএস পাইপ দিয়ে সাটারিং করার কথা থাকলেও কাঁঠ ও বাঁশ দিয়ে সাটারিং করে ঢালাই করা হচ্ছিল। বারবার বলার পরও ঠিকাদার কোনো নিয়ম মানছিলেন না। গত সপ্তাহে বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
বেলকুচি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, “গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয় প্রকল্পে’র আওতায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমেশপুর হাট-বাজার ভবন নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লিটন এন্টারপ্রাইজ’ চুক্তিবদ্ধ হয়। একই বছর জুন মাসে দ্বিতল এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
সিডিউল মোতাবেক ভবনের ছাদ ঢালাইয়ে স্টিলের এমএস পাইপ দিয়ে সাটারিং করার জন্য ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়। কিন্তু ঠিকাদার এর পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের খুঁটির সাটারিং দিয়ে ছাদ ঢালাই শুরু করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দফায় দফায় চিঠি দেয় এবং মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ঠিকাদার মীর সেরাজুল ইসলাম কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে দাপটের সঙ্গে বাঁশের খুঁটি ও কাঠের সাটারিং দিয়ে ঢালাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এদিকে ভবনটির নির্মাণের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল। মেয়াদ পার হয়ে সাত মাস অতিবাহিত হলেও ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যুবলীগ নেতা সেরাজুল ইসলাম নিয়মের তোয়াক্কা না করে দায়সারাভাবে ভবনটির নির্মাণ করে চলে যেতে চাইছেন। তবে নিম্নমানের ভবন নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাবে। কোনোভাবেই যেন নিম্নমানের কাজ করা না হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মীর সেরাজুল ইসলাম বলেন, সাটারিংয়ে বাঁশ ব্যবহার করলে কী সমস্যা? স্টিল দিয়ে সাটারিং করব কিনা, সেটা আমার ব্যাপার। ভবন ভেঙে গেলে ক্ষতিপূরণ আমাকে দিতে হবে, তাতে অন্যের সমস্যা কী? এছাড়া এ বিষয়ে অফিস সব জানে, সমন্বয় করেই কাজ করা হচ্ছে।
বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ভবনটির ছাদ ঢালাইয়ে স্টিলের সাটারিং দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার সেটা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে করছেন। গত অক্টোবর মাসে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার ও সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ঠিকাদার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঢালাই দিলে ভবনের ক্ষতি হতে পারে। এতে ভবনের স্থায়ীত্বকাল কমে যায়। এ কারণে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, সেখানে কোনোভাবেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাটারিং দেওয়া যাবে না। সাতদিনের মধ্যে বাঁশ ও কাঠের সাটারিং খুলে ফেলার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
এসআই